• ‘মিথ্যে’ গণধর্ষণের গল্প! লোকলজ্জায় গৃহবন্দি ৫ অভিযুক্তের পরিবার
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • ধর্ষণ কাণ্ডে নাম জড়ানো অভিযুক্তদের পরিবারগুলির সদস্যদের এখন কেবলই কান্না, অপমান আর অবিশ্বাসের দীর্ঘ ছায়া। দুর্গাপুরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজড়া ও মহুয়াবাগান গ্রাম দুটি যেন এক অভিশপ্ত নীরবতার মধ্যে ডুবে আছে। অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যরা কার্যত গৃহবন্দি। কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না, কেউ কথা বলতেও চাইছেন না। অভিযোগ উঠেছে, এই ঘটনার পর সমাজের চোখে তাঁরা ‘অপরাধীর পরিবার’ হয়ে গিয়েছেন।

    এই ঘটনা ঘিরে অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। ধর্ষণ হয়েছিল, না কি অন্য কিছু আড়াল করতেই নির্যাতিতা ও তাঁর প্রেমিক মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে গ্রামবাসীদের মুখে মুখে। কিন্তু আইনের চোখে ধৃতদের কেউই এখনও অভিযোগমুক্ত নন। পুলিশের তদন্ত চলছে। আর সেই কারণেই অভিযুক্তদের পরিবারগুলির উপর চেপে বসেছে ভয় ও লজ্জার কালো অন্ধকার।

    ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন এক মেডিক্যাল পড়ুয়া, আর এক পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। তাঁর দিদি ঘরে বসে কান্না থামাতে পারছেন না। তাঁর কথায়, ‘ভাইটা প্রতিদিন কাজ শেষে বাড়ি ফিরত। সেদিনও তাই করেছিল। এখন পুলিশ বলছে ও নাকি ধর্ষক! আমি বিশ্বাস করি না। ওকে ফাঁসানো হয়েছে।’

    অন্যদিকে, আর এক অভিযুক্তের পরিবারের সদস্যরাও কারও সঙ্গে দেখা করছেন না। অনেক অনুরোধে জানলা খুলে সেই অভিযুক্তের বাবা বলেন, ‘যা জানার পুলিশের কাছে জানুন। আমাদের আইনের উপর ভরসা আছে।’ তাঁর গলায় যেমন আশঙ্কা, তেমনই অপমানের গ্লানি।

    আরও এক অভিযুক্তের দাদা, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, তিনি সরাসরি সংবাদমাধ্যমের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন। তাঁর ক্ষোভ, ‘কিছু না জেনেই ভাইকে ধর্ষক সাজিয়ে দিলেন!’ তাঁর প্রশ্ন, পুলিশের কাছে দেওয়া এক ছাত্রীর সহপাঠীর বয়ানকেই বা এত দ্রুত বিশ্বাস করল কেন?

    অন্যদিকে, আরও এক অভিযুক্তের বাড়ি তালাবন্ধ। প্রতিবেশীরা জানালেন, ঘটনাটির পর থেকেই পরিবারটি গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছে। কেউ জানে না, তারা কোথায় গিয়েছে। সামান্য দূরেই বাড়ি আর এক অভিযুক্তর। তিনি একটি বেসরকারি কারখানায় ঠিকা কর্মী ছিলেন। দরজায় নক করতেই বেরিয়ে এলেন তাঁর মামা। তাঁর চোখ লাল, গলায় দুঃখ আর ক্ষোভ। বললেন, ‘বাইরে বেরোতে পারছি না। লজ্জায়, লজ্জায়। সব শেষ।’

    গ্রামের মানুষ বিভ্রান্ত, ক্ষুব্ধও বটে। এক বাসিন্দার কথায়, ‘প্রথমে বলা হল গণধর্ষণ। পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। তারপর কমিশনার বলছেন, একজন ধর্ষক। তাহলে বাকিদের গণধর্ষণের অভিযোগে ধরা হল কেন? মোবাইল ছিনতাই আর ধর্ষণ কি এক জিনিস?’

    স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক শেখ নিজামুদ্দিনের গলায় বেদনা, ‘ধৃতদের মধ্যে দুই জন আমার স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। আমি অত্যন্ত ব্যথিত। সমাজে শুভবুদ্ধির জাগরণ হোক, এটাই প্রার্থনা।’

    প্রসঙ্গত, বিজড়া ও মহুয়াবাগান— দুটি গ্রামই বহু পুরনো, ঐতিহ্যপূর্ণ। এই প্রথম এমন কলঙ্কের দাগ পড়েছে গ্রামে। সেই দাগ কার হাতে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এই ঘটনাই গ্রামবাসীদের হৃদয়ে অস্থিরতা ও ক্ষোভের আগুন জ্বেলে দিয়েছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)