• ১০৮ নরমুণ্ডে অধিষ্ঠিত মা, দেওয়া হয় ১০৮ জবাফুল! শ্মশানের ভয়ংকরা কালী, কয়েকশো বছরের তন্ত্রসাধনার ঘোর রহস্যে ঢাকা...
    ২৪ ঘন্টা | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • নকিব উদ্দিন গাজী: আদিগঙ্গার (Adi Ganga) পাড়ে কয়েকশো বছরের প্রাচীন মন্দিরবাজারের দক্ষিণ বিষ্ণুপুর শ্মশান। এই শ্মশানেই আগে ভিড় জমাতেন তান্ত্রিক ও সাধকরা। শবসাধনায় বসতেন অনেকেই। এখনও এ-শ্মশানে ঢুকলে গা ছমছমে পরিবেশ। স্থানীয়দের বিশ্বাস, তান্ত্রিকদের সাধনার জেরে আজও রাতের অন্ধকারে জেগে ওঠে শ্মশান (Burning Ghat)। ঘোরাফেরা করে অপঘাতে মৃতদের আত্মা। প্রায় ৩০০ বছর আগের কথা। 

    ১০৮ জবাফুল নিবেদন ১০৮ নরমুণ্ডকে

    প্রাচীন মন্দিরবাজারের দক্ষিণ বিষ্ণুপুর শ্মশান-লাগোয়া জঙ্গলে তান্ত্রিক মণিলাল চক্রবর্তী শুরু করলেন এই কালীপুজো। স্বপ্নাদেশ পেয়ে টালির চালের মন্দির বানিয়ে দেবীর আরাধনা শুরু করেছিলেন তিনি। তখন বছরে একবারই পুজো হত। পরে স্বপ্নে মা কালী নিত্যপুজোর ইচ্ছা প্রকাশ করলে পাকাপাকিভাবে মায়ের মন্দির গড়া হয়। তখন ১০৮টি নরমুণ্ড উৎসর্গ করে এই মন্দির বানানো হয়, সামনে ছিল পঞ্চমুণ্ডির আসন। এখনও মন্দিরে ঢুকলে দেবীর পিছনে দেখা যাবে ১০৮টি নরমুণ্ড। তার পর থেকেই এখানে পূজিত হয়ে আসছেন করুণাময়ী কালী। এখনও গঙ্গায় স্নান করে ১০৮টি জবাফুল নিবেদন করা হয় ১০৮টি নরমুণ্ডকে।

    তন্ত্রমতে পুজো

    কালীপুজোর দিন আজও হাজারে হাজারে মানুষ আসেন এই মূর্তি দর্শন করতে। তন্ত্রমতে পুজো হয় এখানে। এক সময় নরমুণ্ড উৎসর্গ করা হলেও আজ বলিপ্রথা ভীষণ ভাবে নিষিদ্ধ এই পুজোয়। বরং কালীপুজোর দিন কাঁচা মাংস, ছোলা, মদ নিবেদন করা হয় ডাকিনী-যোগিনীকে। শিয়াল ভোগও দেওয়া হয়। এবং স্থানীয়দের বিশ্বাস, কালীপুজোর রাতে আজও শ্মশান জাগানোর খেলায় মেতে ওঠেন সেবায়েতরা। আজ থেকে শত শত বছর আগে এই শ্মশানে চলতো শবসাধনা। এমনকী নরমুণ্ড নিবেদন করে দেবীর উপাসনার কথাও শোনা যায়। 

    জেগে ওঠে শ্মশান

    এখন সে সবের চল না থাকলেও, কালীপুজোর রাতে আজও বিষ্ণুপুর শ্মশানে ঢুকলে গা ছমছম করে, অস্বস্তি বোধ করেন অনেকেই। কালো মাটির বাঁকে-বাঁকে আজও জীবন্ত ইতিহাস। পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে প্রাচীনত্বের শিকড়। কিন্তু আদিগঙ্গার পাড়ে অদ্ভূত এক আলো-আবছায়ার মিশেল, যা দীপাবলির রাতে জাগিয়ে রাখে গোটা বিষ্ণুপুরকে। সময়ের ঘষা লেগে তন্ত্রসাধনা ও শবসাধনা কল্পকথা হয়ে গেলেও, এই একটি রাতই আজও সাবেকিয়ানার সঙ্গে বেঁধে রেখেছে এলাকার মানুষকে। 

    গুপ্তবিদ্যা এবং

    মণিলাল মারা গিয়েছেন অনেক আগেই। তাঁর মৃত্যুর পর ভাই ফণীভূষণ চক্রবর্তী সেবায়েত নিযুক্ত হন। এখন মণিলালের ছেলে শ্যামল চক্রবর্তী মন্দিরের সেবায়েতের দায়িত্বে রয়েছেন। সত্তরোর্ধ্ব শ্যামল চক্রবর্তী প্রধান সেবায়েত। তিনি বলেন, "বাবার মৃত্যুর পর কাকা ফণীভূষণ চক্রবর্তীর কাছে তন্ত্রের শিক্ষা নিতে থাকি। তাঁর হাত ধরেই গুপ্তবিদ্যা নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু। পরে করুণাময়ী মন্দিরে নিত্য পুজো শুরু করি। কালীপুজোর আগে এই মুহূর্তে তুমুল ব্যস্ততা তাঁদের । দালানে নতুন রং'য়ের প্রলেপ পড়ে গিয়েছে। ঝাড়পোঁছ করে সাজানো হচ্ছে নরমুণ্ডগুলি। পুজোর দিন দূরদূরান্ত থেকে বহু ভক্ত আসেন এই পুজো দেখতে। মনস্কামনার জন্য মন্দিরের সামনে একাধিক ঢিল বেঁধে রাখেন ভক্তেরা। তবে এক সময় এই মন্দিরে আসতে ভক্তরা ভয় পেতেন। চারিদিকে গা ছমছমে ভাব, অন্ধকার জঙ্গল। এখন অবশ্য অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে এর। রয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বসার জায়গা, রয়েছে আলো। কিছুটা হলেও আধুনিক হয়েছে মন্দির চত্বর।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)