• অপঘাতে মৃত কুমারী মেয়ের হাড় দিয়ে তৈরি দেবী মূর্তি, মেদিনীপুরের এই কালীপুজোর গল্প শুনলে গায়ে কাঁটা দেবে
    এই সময় | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • মেদিনীপুর শহরের মহতাবপুর এলাকায় মা কালীর মন্দিরে পুজো ঠিক কবে শুরু তা তারিখ ধরে কেউই বলতে পারেন না। এই মন্দির ও দেবীকে ঘিরে রয়েছে তন্ত্র-মন্ত্রের নানা অলৌকিক কাহিনী। এমনকী মন্দির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জুড়ে অপঘাত মৃত এক মেয়ের গল্প।

    জনশ্রুতি অনুযায়ী, পরাধীন ভারতে এক ভিনদেশি সাধুবাবা শুরু করেছিলেন এই মন্দিরের পুজো। যদিও তাঁর পরিচয় সম্পর্কে স্পষ্ট ভাবে কেউ কিছুই জানেন না। যদিও সেই সাধুবাবাই মেদিনীপুর শহরের মহতাবপুর এলাকায় মা কালীর মন্দির (উগ্র তারা মায়ের মন্দির) গড়ে তোলেন এবং পুজো শুরু করেন। এই ব্যাপারে কোনও দ্বিমত নেই। ওই মন্দিরের পাশেই মেদিনীপুর শহরে হিন্দুদের দাহ করার একমাত্র শ্মশানঘাট- পদ্মাবতী মহাশ্মশান। স্বাভাবিকভাবেই মেদিনীপুর শহরবাসীর কাছে এই পুজো আসলে শ্মশান-কালী মায়ের পুজো হিসেবেই খ্যাত।

    মন্দির কমিটির সদস্য তথা বর্তমানে অন্যতম সেবাইত তপন পাখিরা জানান, মাঘ মাসের রটন্তী চতুর্দশীকে মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন ধরা হয়। তপনবাবু এও বলেন, ‘একসময় এই জায়গাটা ছিল ঝোপজঙ্গলে পূর্ণ। হঠাৎই এখানে এক সাধুবাবা থাকা শুরু করেন। তিনি কোথা থেকে এসেছিলেন, তা কেউ জানে না। তবে তিনি তন্ত্রসাধনা করতেন। এক সময়ে তিনিই এই এলাকার বাসিন্দা, স্বর্গীয় পশুপতিনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে একটু জমি নিয়ে মন্দির গড়ে তোলার ইচ্ছে প্রকাশ করেন।’

    প্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী, মেদিনীপুর শহরের বক্সীবাজার এলাকার এক ব্রাহ্মণ পরিবারের অবিবাহিতা তরুণীর অপঘাতে মৃত্যু হলে, তাঁর শরীরের হাড়গোড় ও মাথার খুলি দিয়ে মূর্তি গড়ে তোলেন সাধুবাবা। সেই সঙ্গেই রটন্তী চতুর্দশীর রাতে পুজো শুরুর আগে 'নরবলি'-ও দেওয়া হয় বলে শোনা যায়। যদিও, সাধুবাবার অলৌকিক ক্ষমতাবলে ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে ধরতে এসেও নরবলির প্রমাণ পায়নি!

    তপন বলেন, ‘এই উগ্র তারা মায়ের মূর্তিতে খড়ের পরিবর্তে কুশ ব্যবহার করা হয়েছে। তার উপরে মাটি দিয়ে তৈরি হয়েছে অবয়ব। একথা যে সত্য সেই প্রমাণ আজও আমরা পাই।’

    প্রতি ১২ বছর ছাড়া দেবীর 'নব কলেবর' হয় বলে জানান তপন পাখিরা, দুর্গাশঙ্কর মিশ্ররা। সেই নব-কলেবরের সময়, দেবীর মূর্তি কাঁসাই নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। আর নিরঞ্জনের আগে দেবীর শরীর থেকে বের করে নেওয়া হয় সমস্ত হাড়গোড়। নতুন মূর্তিতেও ঠিক একইভাবে হাড়গুলি দিয়ে কাঠামো তৈরি করা হয়। ২০২৮ সালের রটন্তী চতুর্দশীর দিন পরবর্তী নব-কলেবর হবে বলে জানান তপন, দুর্গাশঙ্কররা।

    মন্দিরের পুরোহিত দুর্গাশঙ্কর মিশ্রর কিছু অলৌকিক অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই দেবী নানা রূপে দেখা দেন। সাত-আট বছর আগে, দুর্গাপুজোর ঠিক আগে আগে এক সন্ধ্যায় হঠাৎই এক তরুণী রূপে তিনি আবির্ভূতা হয়েছিলেন। ওই সন্ধ্যায় আমার আরতি করতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। আমি আসলে ঢাকির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎই অজ্ঞাত-পরিচয় এক তরুণী এসে আমাকে বলে, তুই কখনও কারও জন্য অপেক্ষা করবি না, নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন আরতি করবি। এর পরে আমি আরতিতে ব্যস্ত হয়ে যাই। দেখি ওই তরুণী উধাও! তারপর আর কখনও কোনদিন এই এলাকায় তাকে দেখিনি।’ মন্দিরের সেবাইত তপন জানান, রটন্তী চতুর্দশীর সঙ্গে সঙ্গেই এখানে কালীপুজোও ধুমধাম করে অনুষ্ঠিত হয়। অন্নভোগ খাওয়ানো হয়। আগে ছাগ বলি চালু থাকলেও এখন তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে শুধু লাউ, চালকুমড়ো প্রভৃতি বলি দেওয়া হয়।

  • Link to this news (এই সময়)