ধনতেরস বা ধন ত্রয়োদশী। সম্পদ ও সমৃদ্ধির উৎসব। কথিত আছে, দেবী লক্ষ্মী এই দিনে ভক্তদের কাছে যান। এই শুভদিনে কেনাকাটা করলে তাঁদের সম্পদ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পায়। তাই ধনতেরসে সোনা, রুপো ইত্যাদি মূল্যবান ধাতু কেনাকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এই দিনে সমুদ্র মন্থনের সময় অমৃত কলস হাতে আবির্ভূত হয়েছিলেন ধন্বন্তরী। তাঁর জন্ম হয়েছিল কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে। এই তিথি ধন ত্রয়োদশী নামেও পরিচিত। সেজন্য এদিন পেতলের বা অন্য কোনও ধাতুর বাসনপত্র কেনার রীতি রয়েছে। অনেকে আবার ঝাঁটাও কেনেন। কারণ ঝাঁটা দিয়ে নাকি অলক্ষ্মী দূর করে মা লক্ষ্মীর আগমন সূচিত হয়। এদিন পূজিতা হন সম্পদের দেবতা কুবেরও। পুজো হয় গণেশেরও। এমনকী যমের উদ্দেশ্যেও প্রদীপ জ্বালানোর রীতি রয়েছে।
প্রতিটি ঘটনার পিছনেই কোনও না কোনও পৌরাণিক কাহিনী বা লোকগাথা রয়েছে। মূল কথা হল আমরা উৎসব ভালোবাসি। যে কোনও ঘটনাকেই উৎসবের রূপ দিতে আমাদের জুড়ি মেলা ভার। সোনার গয়না, বাসনপত্র কখনও না কখনও কিনতেই হয় আমাদের। একটি নির্দিষ্ট সময়কে শুভ বলে চিহ্নিত করে দেওয়ায় প্রয়োজন না থাকলেও মানুষ এসব কিনছেন। নিদেনপক্ষে একটি বাটি চামচ হলেও কেনাটা অনিবার্য হয়ে পড়ছে। এর পিছনে কতটা ঐতিহ্য-আচার আর কতটা বিপণন কৌশল, সেই প্রসঙ্গে না গিয়েও বলা যায়, আজ থেকে দুই দশক আগেও ধনতেরসের এমন রমরমা বাজার ছিল না। আমাদের বাঙালিদের একটা বড় গুণ হল আমরা গ্রহণ করতে, আত্তীকরণ করতে বড় ভালোবাসি। মাঝখান থেকে বাঙালির নিজস্ব সাবিত্রী ব্রত অন্ধকারে মুখ লুকিয়েছে। বাজারে, সোনার দোকানে, বাসনপত্রের দোকানে তাই অবাঙালির চেয়ে বাঙালি ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। ভালো দিক একটাই। এই ধনতেরসকে উপলক্ষ্য করে গয়নার মজুরি হ্রাস, বিবাহযোগ্যা মেয়ের মা বাবার প্রাণে একটু স্বস্তির বাতাস বয়ে আনে।
বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী। তাই ধনতেরসের মাধ্যমে বাঙালির বাণিজ্যে জোয়ার এলে একদিক দিয়ে তো ভালোই। বড় থেকে ছোট যে কোনও স্তরের ধাতু ব্যবসায়ীদের কাছেই এই সময়টি তাই উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে, সোনা রুপোর মতো মূল্যবান ধাতু সংসারের থাকলে প্রয়োজনে কাজে দেয়। তাই ধনতেরস উপলক্ষ্যে এই ক্রয়-বিক্রয়ের প্রবণতা আধুনিক বিপণনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘরানাও বটে।
(লেখিকা জোত আরাপুর টিপাজানি গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা)