হোক না অবাঙালির উৎসব, বাঙালি নিজের করে নিয়েছে ধনতেরসকে। সময়ের সঙ্গে বঙ্গ জীবনের উৎসবের অংশ হয়ে গিয়েছে এক সময় উত্তর ও পশ্চিম ভারতের এই প্রথা। প্রায় দু’দশক আগেও বাঙালির জীবনে ধনতেরসের চল তেমন ছিল না। বাঙালি সরস্বতীর কৃপাদৃষ্টি পেতেই ভালোবাসে। তবে, বাংলার বাণিজ্যেও লক্ষ্মী বসত করত একটা সময়। বাংলার ঘরে ঘরে প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুজোর চল রয়েছে। শরতে বাঙালি তাঁর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোয় লক্ষ্মীর আরাধনাও করে। বিজয়ার পর উৎসবের রেশ ধরে রাখে পূর্ণিমা তিথির কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। কিছু বাঙালি কালীপুজোতেও মহালক্ষ্মীর আবাহন করেন অলক্ষ্মী বিদায় করে।
কিন্তু দীপাবলীর আগে কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীতে পালিত ধনতেরস যা ছিল অবাঙালি ব্যবসায়ীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তা এখন বাঙালিরাও জাঁকজমক সহকারে পালন করছেন। ধনতেরস নিয়ে নানা লোককথা প্রচলিত। দেব বৈদ্য ধন্বন্তরী এই দিনটিতে অমৃতের পাত্র হাতে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
অন্য মতে, সমুদ্র মন্থনে দেবী লক্ষ্মীর আবির্ভাব হয় এই দিনে। তাই ধনলক্ষ্মীর পুজোর প্রচলন। এভাবেই ধনত্রয়োদশী বা ধনতেরসে ধনসম্পদ, বিশেষ করে সোনা ও রুপোর অলংকারসহ নানা সামগ্রী কেনাকাটা করে সংসারে শ্রীবৃদ্ধি করা মঙ্গলজনক বলে মনে করা হয়। এই দিনটির তাৎপর্য বোঝা যায় গয়নার দোকানগুলিতে উপচে পড়া ভিড় দেখলেই। বাঙালি গৃহিণীরা সপরিবার সারা বছর জমিয়ে গয়না কেনেন। অল্পবয়সী মেয়েরাও নতুন ডিজাইনের গয়না সংগ্রহ বাড়াতে এই সময়কে বেছে নেয়। আকর্ষণীয় উপহারের হাতছানিও থাকে ক্রেতাদের জন্য! তবে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম এর দোকানগুলিও পিছিয়ে নেই। এই সময় টিভি, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন মোবাইল, ল্যাপটপ কেনার হিড়িকও চোখে পড়ার মতো। সব মিলিয়ে সকল স্তরের ব্যবসা বাণিজ্যেই রমরমা।
অনেকই এই দিনটিতে জমি, জায়গা, নতুন বাড়ি কিনে থাকেন। অনেকে আবার শেয়ার কেনার জন্যও বেছে নেন ধনতেরসকে। এভাবেই আকর্ষণ বাড়ছে এই দিনটির। কৃষিপ্রধান বাংলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশকিছুটা সহায়ক ধনতেরস উৎসব। কিন্তু বর্তমান মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে ভারতে ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য বৃদ্ধির হার বাড়ছে। তবুও, গগনচুম্বী মূল্য হলেও সোনার অলংকার কেনা কেনা কমে না। সামর্থ্য অনুযায়ী রূপোর অলঙ্কার কিনে মন ভালো করছে তারা। তালিকায় থাকছে কাঁসা, পিতলের বাসনপত্রও। যাঁদের এসব কেনারও সামর্থ্য নেই, তাঁরা কড়ি, ধান, লবণ কিনছেন। এই লিস্টে নবতম সংযোজন ঝাঁটা! মৎস্যপুরাণ মতে ঝাঁটায় লক্ষ্মীর বাস। তাই উৎসবপ্রিয় বাঙালি ঝাঁটা কিনে লক্ষ্মীলাভের সুযোগ হাতছাড়া করছে না।