ভারত-ভুটান সীমান্তের জিরো পয়েন্টে মাদারিহাটের মাকরাপাড়া চা বাগান। ঠিক জিরো পয়েন্টেই পাহাড়ি টিলা। ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যে থাকা সেই পাহাড়ি টিলার উপর মাকরাপাড়া চা বাগানের দক্ষিণা কালীমন্দির। বাগান কর্তৃপক্ষের এই দক্ষিণা কালীমন্দিরের পুজো শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ জমানায়। এখানকার মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়েছে ভুটানের থিম্পু, গ্যালেফু, শিবচু, পাড়ো, পাগলি ও গোমটু সহ বিভিন্ন শহরে। প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের বিশ্বাস, মাকরাপাড়ার দক্ষিণা কালীপুজোয় পায়রা উড়ালে রোগ ব্যাধির নিরাময় হয়। সেই জন্য প্রতিবছর পুজোর দিন মন্দিরে মানত করে ভুটানের নাগরিকরা সাদা পায়রা উড়িয়ে দেন।
পাহাড়ি টিলার উপর মাকরাপাড়া দক্ষিণা কালীমন্দিরের ঠিক পিছনেই নীলাভ ভুটান পাহাড়। মায়ের নামে উৎসর্গিত সেই পায়রা নৈসর্গিক পাহাড়ে মিলিয়ে যায়। দক্ষিণা কালীর মাহাত্ম্য এমনই যে ভারতীয় ভূখণ্ডে থাকা এই কালীমন্দিরে সারা বছর বিনে পয়সায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। মন্দিরে কোনও মিটার বক্স নেই। ভুটানের একটি সিমেন্ট কোম্পানি মন্দিরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
বীরপাড়া থেকে ১৬ কিমি দূরে মাকরাপাড়া চা বাগানটি। ব্রিটিশ জমানায় পাহাড়ি টিলার নীচে সমতলে একটি বটগাছের তলায় টিনের শেডে দক্ষিণা কালীপুজোর সূচনা হয়েছিল। জায়গাটি হাতির করিডর হিসাবে পরিচিত ছিল। হাতির দল যখন তখন মন্দিরের টিনের শেড ভেঙে দিত। জনশ্রুতি রয়েছে, সেই কারণে মাকরাপাড়া চা বাগানের তৎকালীন ম্যানেজারকে মা স্বপ্নাদেশে জানান পাহাড়ি টিলার উপরে মন্দির তৈরি করে তাঁর পুজো করতে হবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫০ সালে ওই পাহাড়ি টিলার উপর মায়ের পাকা মন্দির তৈরি হয়। ৫১টি সিঁড়ি ভেঙে ওই মন্দিরে গিয়ে মায়ের মুখ দর্শন করতে হয়।
এখানকার পুজোর ভোগেও নানা বৈচিত্র্য আছে। এখানে মাকে পাঁচরকম ভাজা দেওয়া হয়। আলাদা করে বোয়াল মাছের স্পেশাল ভোগও দেওয়া হয়। পুজোর দিন ভক্তদের মধ্যে খিচুড়ি বিলি করা হয়। পুজোতে মায়ের পায়ে জোড়া ডাব বলি দেওয়া হয়। আর পুজোতে বিশেষ আকর্ষণ মায়ের নামে মানত করে ভক্তদের পায়রা উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য।
সারা বছর এই মন্দিরে পুজো করে মাকরাপাড়া চা বাগান কর্তৃপক্ষ। বাগানের বর্তমান ম্যানেজার দীপেশ করণ বলেন, এবার তাঁদের মন্দিরের পুজো ৭৫ বছরে পড়েছে। পুজোর প্রস্তুতি চলছে। মন্দিরের পুরোহিত সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, আমার ঠাকুরদা ও বাবা পুরোহিত ছিলেন। বাবার পর আমি পুজো করছি। এখানে মায়ের পাথরের মূর্তি।