দিনহাটার বুড়িরপাঠের বনদুর্গা এখন বুড়ি মা হিসেবেই পরিচিত
বর্তমান | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
রাজীব বর্মন , দেওয়ানহাট:
আশ্বিনের সংক্রান্তিতে শতাব্দী প্রাচীন সম্প্রীতির বনদুর্গার পুজোকে ঘিরে সর্বধর্মের মিলন ক্ষেত্র হয়ে ওঠে দিনহাটার বুড়িরপাঠ। জাতি ধর্ম নির্বিশিষে একাকার হয়ে যায় মেলার দিনগুলিতে। পুজো কমিটির মধ্যেই রয়েছে সম্প্রীতির মেলবন্ধন। কমিটিতে কোনও ধর্মের বিভাজন নেই। এবার পুজোর ১৪১তম বর্ষ।
যদিও দিনহাটার বুড়িরপাঠের এই বনদুর্গা পুজো কালান্তরে এখন বুড়ি মা হিসেবেই পরিচিত ভক্তদের কাছে। ১৮৮৫ সালে পুজো শুরু হয়। পুজোকে কেন্দ্র করে মন্দির সংলগ্ন মাঠে পাঁচদিন চলে মেলাও। মন্দিরের পাশের মুক্ত মঞ্চে যাত্রা পালা থেকে লোক সংগীতের আসরও বসবে মেলার দিনগুলিতে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয় এই পুজোতে।
আশ্বিনের সংক্রান্তিতে দিনহাটার বুড়িরপাঠের এই বনদুর্গা পুজো শুরুর ইতিহাস রয়েছে। ১৮৮৫ সালে তৎকালীন কোচবিহার মহারাজার রাজ কর্মচারী ছিলেন পুঁটিমারি গ্রামের শ্রীনাথ রায় বর্মা, হেমচন্দ্র বক্সিরা। তাঁরা রাজার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন। অধুনা বাংলাদেশের রংপুর পরগনাতে একবার তাঁরা রাজস্ব আদায়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে রাত হয়ে যাওয়ায় তাঁরা একটি গ্রামে রাত্রিযাপন করেন। সেই রাতেই দেবী স্বপ্নাদেশ দেন গ্রামে ফিরে তাঁরা যেন তাঁর পুজো করেন। তবে দেবী দুর্গা রূপে না করে আশ্বিন মাসের সংক্রান্তিতে তাঁরা যেন বনদুর্গা রূপে দেবীকে পুজো করেন। সেখান থেকে তাঁরা নিজেদের গ্রামে ফিরে আসার পর দিনহাটার পুঁটিমারি গ্রামে ফিরে আশ্বিনের সংক্রান্তিতে এই পুজো শুরু করেন। সেই থেকেই আজও চলে আসছে দিনহাটার এই সম্প্রীতির বুড়ি মায়ের পুজো।
পুজো কমিটির কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, এটা শতাব্দী প্রাচীন পুজো। শুরুতে বনদুর্গা হিসাবে পুজো হলেও, এখন ভক্তদের কাছে বুড়ি মা হিসেবেই বেশি পরিচিত। এই পুজো সম্প্রীতির অনন্য নজির। ধর্মের কোনও ভেদাভেদ নেই। প্রতিবছর ভক্তিভরে হিন্দু, মুসলিম সকলেই এই পুজোয় যোগ দেন। দীর্ঘদিন তো পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে পিয়ার আলি অন্যতম ছিলেন। বুড়ি মায়ের পুজো উপলক্ষ্যে এবার পাঁচদিনের মেলা বসছে। প্রতিদিন পালা গান মঞ্চস্থ হবে। পুঁটিমারি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কাকলি রায় বর্মন বলেন, আমাদের পুজোয় কোনও ভেদাভেদ নেই। শুরু থেকেই সর্ব ধর্মের মানুষ বুড়ি মায়ের পুজোয় অংশ নেয়। ফাইল চিত্র।