নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: আলোর উৎসব দীপাবলির সূচনা হয় ধনতেরাস থেকে। ‘ধন’ শব্দের অর্থ সম্পদ, আর ‘তেরাস’ মানে ত্রয়োদশী তিথি। কার্তিক মাসে কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে সোনারুপো বা অন্য ধাতু কেনা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করে হিন্দুসমাজ। কৃষ্ণনগর শহরেও ধনতেরাসে সোনা বা রুপো কেনেন অনেকেই।
এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দু’টি পৌরাণিক কাহিনী। পুরাণে বলা হয়েছে, দেব ও অসুরগণ অমৃতপ্রাপ্তির আশায় সমুদ্র মন্থন করেছিলেন। সেই মন্থনে ধন্বন্তরী দেব সোনার কলসে ভরা অমৃত নিয়ে সমুদ্র থেকে উঠে আসেন। তাঁকেই আয়ুর্বেদের প্রবর্তক বলে মানা হয়। ধনতেরাসের শুভ তিথিতেই তিনি সমুদ্রমন্থনে উঠে এসেছিলেন। সেজন্য এই দিনে সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও রোগমুক্ত জীবনের আশায় তাঁর পুজো করা হয়। চিকিৎসক সমাজ ও স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্তদের কাছে এই দিনটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
সেইসঙ্গে ধনতেরাসের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে কিংবদন্তির রাজা হেমের কাহিনী। পুরাণ অনুযায়ী, রাজা হেমের এক পুত্রের জন্মকুণ্ডলীতে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে, বিবাহের চতুর্থ রাতেই সাপের ছোবলে রাজকুমারের মৃত্যু হবে। রাজপুত্রের স্ত্রী এই ভবিষ্যদ্বাণী জানতে পেরে স্বামীর প্রাণরক্ষায় এক অভিনব কৌশল বের করেন। তিনি বিবাহের চতুর্থ রাতে স্বামীর ঘরের দরজায় প্রচুর সোনারুপোর পাশাপাশি প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখে দেন। দরজার সামনে বসে তিনি সারা রাত গান গেয়ে স্বামীকে জাগিয়ে রাখেন। যমদূত সাপের রূপে এসে যখন রাজপুত্রের ঘরে প্রবেশ করতে চায়, তখন দীপের আলো ও সোনার দীপ্তিতে তার চোখ ঝলসে যায়। রাজপুত্রের স্ত্রী তাকে প্রবেশ করতে দেননি। অবশেষে যমদূত ফিরে যায় ও রাজপুত্রের জীবন রক্ষা পায়। তাই অমঙ্গল ও মৃত্যুকে দূরে রাখতে ধনতেরাসের রাতে দীপ জ্বালানো হয়। এই দিনে ব্যবসায়ীরাও লক্ষ্মী ও কুবেরের পুজো করে নতুন হিসেবপত্র শুরু করেন। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পুরাণ অনুযায়ী, এই দিনে দেব-চিকিৎসক ধন্বন্তরীর আবির্ভাব হয়েছিল। রাজা হেমের পুত্রের কিংবদন্তি আমাদের শেখায়-আলো ও বিশ্বাসই অমঙ্গল দূর করে। ধনসম্পদের পাশাপাশি বিশ্বাস, সুস্বাস্থ্য ও আলোতেই জীবনের প্রকৃত সমৃদ্ধি নিহিত-ধনতেরাস তা আমাদের মনে করিয়ে দেয়।