আউশগ্রামে আদুরিয়ার জঙ্গলে আলো নিভিয়ে চলে শালকো কালীর আরাধনা
বর্তমান | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদদাতা, কাটোয়া : আউশগ্রামের আদুরিয়ায় গভীর জঙ্গলে আজও বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়েই পুজো হয় ‘শালকো কালী’র। টিনের ছাউনি দেওয়া বেদিতেই নিঃশব্দে দেবীর পুজো চলে। চলে মন্ত্রপাঠ। শালকো গ্রামে এখন আর কেউ থাকেন না। তবে এই গ্রামে কালীপুজোর রাতে ফিরে আসেন সবাই। এভাবেই শক্তির আরাধনায় মাতোয়ারা হন আশপাশের সব গ্রামের বাসিন্দারা। আউশগ্রাম-২ ব্লকের অমরপুরেই আদুরিয়ার জঙ্গল। আদুরিয়া গ্রাম থেকে প্রায় দু’কিমি দুরে শালবনের মধ্যে রয়েছে একটি বেদি। জনশ্রুতি, ওই বেদির তলায় নাকি রয়েছে পঞ্চমুণ্ডির আসন। অতীতে সেই আসনের উপরেই মা কালীকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শালকো গ্রামের বাসিন্দারা। সেই থেকেই এই শ্মশানকালীর পুজো হয়ে আসছে। তবে গ্রামের রয়েছে এক করুণ ইতিহাস।
জানা গিয়েছে, অতীতে কলেরা থেকে রক্ষা পেতে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন বাসিন্দারা। তারপর সাজানো গ্রাম শালবনের মধ্যে কবেই হারিয়ে গিয়েছে। এখন আর সেখানে কোনও জনবসতি নেই। কিন্তু রয়ে গিয়েছেন গ্রামের দেবী। নির্জন জঙ্গলের মধ্যেই তিনি আজও অধিষ্ঠান করে আসছেন। আউশগ্রামের আদুরিয়ার জঙ্গলের মধ্যেই পুজো হয় ‘শালকো কালী’র। পুরনো রেওয়াজ রয়েছে, উন্মুক্ত স্থানে বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়ে গভীর রাতে দেবীর পুজো করতে হয়। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, আসলে এই জঙ্গল এলাকার মধ্যে একসময় একটি গ্রাম ছিল। সেই গ্রামের নাম ছিল শালকো। দু’শোরও বেশি পরিবারের বসবাস ছিল। বহু বছর আগে গ্রামে একবার কলেরা রোগ দেখা দেয়। গ্রামের বহু মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অনেকেরই তখন শেষ অবস্থা। সেসময় রাতারাতি গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছিলেন বাকি গ্রামবাসীরা। তাঁরা শালকো থেকে উঠে গিয়ে আদুরিয়া, জালিকাঁদর, গোয়ালআড়া প্রভৃতি গ্রামে আশ্রয় নেন। তারপর আর কেউ ফিরে আসেননি। পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি কালের নিয়মে জঙ্গলের মধ্যে হারিয়ে যায়। গ্রাম ছাড়ার আগে শালকো গ্রামের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালীকেও তখন অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন স্থানীয় মানুষজন। কিন্তু দেবী নিজের আসন ছেড়ে অন্যত্র যেতে রাজি হননি বলেই এলাকাবাসীর বিশ্বাস। তাই আজও শালবনের জঙ্গলে এসেই দেবীর পুজো করতে হয়।
গ্রামের বাসিন্দা তুহিন কোনার বলেন, বছরের প্রত্যেক অমাবস্যায় দেবীর পুজো দিতে হয়। মূল পুজো হয় দীপান্বিতা অমাবস্যায়। পুজোর প্রয়োজন ছাড়া আর কেউ শালকো কালীর বেদির আশপাশে ঘেঁষেন না। একবার চাঁদা তুলে একটি মন্দির নির্মাণের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু যতবার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, ততবারই বাধা বিপত্তির সামনে পড়তে হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, দেবী বদ্ধ ঘরে থাকতে চান না। তাই মন্দির তৈরি হয়নি। শুধুমাত্র টিনের একটি ছাউনি করে দেওয়া হয়েছে। তবে পুজোর সময় ছাউনির পিছন দিক শালপাতা দিয়ে আড়াল করে দিতে হয়। আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের মূল আকর্ষণ থাকে এই শালকো মায়ের পুজোয়। • নিজস্ব চিত্র