মোমবাতি তৈরি করে সংসারের হাল ফেরালেন কালনার গৃহবধূ
বর্তমান | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
গণেশ মজুমদার , কালনা:
দীপাবলি ও কালীপুজোয় মোমবাতির চাহিদার কথা মাথায় রেখে কালনার মুক্তারপুরে মহিলাদের উদ্যোগে মোমবাতি তৈরির কারখানায় কাজ চলছে জোর কদমে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকেররা এসে মোমবাতি নিয়ে যাচ্ছেন। চাহিদা অনুযায়ী অর্ডারও দিয়ে যাচ্ছেন।
কালনার মুক্তারপুরের বাসিন্দা শচীন ব্যাপারি ছোটখাটো ব্যবসা করেন। তাতে সংসার খুব কষ্টেই চলে। আর্থিক অনটনে স্বামীর পাশে দাঁড়াতে ২০১৯ সালে ঋণ নিয়ে নিজের বাড়িতে মোমবাতি তৈরির কাজ শুরু করেন তাঁর স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়া ব্যাপারি। করোনা পরিস্থিতিতে যখন সবাই আর্থিক দিক দিয়ে সমস্যায়। সেই সময় বাইরে থেকে পাইকারি মোমবাতি বিক্রেতারা কালনা সহ আশেপাশে আসতে পারেনি। সেই সুযোগে কালনা সহ আশেপাশ নবদ্বীপ ধাত্রীগ্রাম সমুদ্রগড় গুপ্তিপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকায় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তিনি দোকানে দোকানে মোমবাতি বিক্রি করে ভালো লাভ করেন। শ্রীবৃদ্ধি ঘটে ব্যবসায়। তারপর থেকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বিশ্বকর্মা পুজো থেকে শারদ উৎসব, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজোয় মাস চার-পাঁচেক মোমবাতির ব্যাপক চাহিদা থাকে। দোকানদাররা কোনও কোনও ধরনের মোমবাতি কতটা লাগবে তার আগাম অর্ডার দিয়ে দেন। পাঁচ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দাম পর্যন্ত মোমবাতি তৈরি করেন। যা কি না এক ঘণ্টা থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে জ্বলবে বলে দাবি বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীর।
তার কথায় কলকাতা থেকে ট্রান্সপোর্ট মাধ্যমে মোমবাতির মূল উপকরণ প্যারাফিন আনেন। তারপর তা গলিয়ে নিদিষ্ট লোহার ডাইসে ফুটন্ত মোম ঢেলে তৈরি করেন বিভিন্ন ডিজাইনের মোমবাতি। দীপাবলি ও কালীপুজোয় বিক্রিবাট্টা সব থেকে বেশি। তবে, আগের তুলনায় প্যারাফিনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভ কিছুটা কমেছে বলে জানান তিনি। তাঁর দাবি, এলইডি আলোর দাপট সত্ত্বেও আজও মোমবাতির গুরুত্ব রয়েছে পুজো ও অনুষ্ঠানে। বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীর ছেলে সুজিত ব্যাপারি নিজে কলকাতায় ব্যাগের কারখানায় কাজ করেন। তবে, পুজোর সময় মাকে সাহায্য করেন। তিনি বলেন, মায়ের সঙ্গে সহযোগিতা করি। তাতে বেশি মোমবাতি তৈরি করা যায়। লাভের অঙ্ক বাড়ে। মায়ের শারীরিক সমস্যার কারণে এখন আমি ও বাবা মিলে মার্কেটে বিক্রির বিষয়টা দেখি। বাড়িতে আরও কয়েকজন মহিলা কাজ করেন।
বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী বলেন, বৈদ্যতিক আলো বাজারে এলেও এখনও মোমবাতির দীপাবলি ও কালীপুজোয় মোমবাতির চাহিদা রয়েছে। গুণগত মান ঠিক রেখে মাল তৈরি করলে ও সঠিক মার্কেটিংয়ে লাভ ভালো হয়।