নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: দীর্ঘদিন আগেই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন স্ত্রী। মাসকয়েক আগে প্রেমিক রবি ফুসলিয়ে ওই মহিলাকে নিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ। তখন থেকেই রবি প্রসাদের উপর ক্ষোভ আর প্রতিশোধের বারুদ জমছিল বিকাশ চৌধুরীর মনে। বৃহস্পতিবার রাতে তারই চরম পরিণতি ঘটল। ফ্ল্যাটে দলবল নিয়ে রবি হাজির হতেই তাকে ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে বিকাশ। হাওড়ার কাসুন্দিয়ার খুনের ঘটনায় পুলিশের কাছে এমনটাই কবুল করেছে অভিযুক্ত বিকাশ চৌধুরী। খুনের ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে গ্রেফতার করে শিবপুর থানার পুলিশ। ধৃতকে এদিন হাওড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক সাতদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
বৃহস্পতিবার রাত দশটা নাগাদ কাসুন্দিয়ার গণেশ মাজি লেনের পাঁচতলা একটি আবাসনের সিঁড়িতে রবি প্রসাদ (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে। রবিকে খুন করে চম্পট দেয় ওই ফ্ল্যাটেরই চারতলার বাসিন্দা বিকাশ চৌধুরী। রক্তমাখা ছুরি নিয়ে হাওড়ার রামেশ্বর মালিয়া লেনের একটি ঝোপে লুকিয়ে ছিল সে। পুলিশের কাছে ধরা পড়তেই অপরাধের কথা স্বীকার করে বিকাশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ফ্ল্যাটে বেশ কিছু পরিবার ভাড়ায় থাকে। ফ্ল্যাটের মালিক তথা প্রোমোটারের হয়ে ভাড়া আদায় করত রাজবল্লভ সাহা লেনের বাসিন্দা রবি প্রসাদ। মাঝেমধ্যেই দলবল নিয়ে ফ্ল্যাটের ছাদে উঠে মদ্যপান করত সে। সেই আসরে বিকাশও থাকত। বিকাশ পেশায় টোটোচালক। বছরখানেক আগে বিকাশের স্ত্রীর সঙ্গে রবির বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তা নিয়ে বিকাশ ও রবির মধ্যে ইতিপূর্বে মারপিটও হয়। মাস তিনেক আগে বিকাশের স্ত্রী কাউকে কিছু না বলে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে যায়। স্ত্রী নিখোঁজ হওয়ায় পুলিশের কাছে নিখোঁজের ডায়েরি করেছিল বিকাশ।
এরপর সে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানতে পারে, তার স্ত্রী রবির সঙ্গে রয়েছে। তখন থেকেই বিকাশ ও রবির মধ্যে শত্রুতা চরম আকার নেয়। ফ্ল্যাটে মা ও নাবালক ছেলেকে নিয়ে থাকত বিকাশ। মাঝেমধ্যেই ফ্ল্যাটে দলবল নিয়ে এসে রবি তাকে হুমকি দিয়ে যেত। পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে বিকাশকে হুমকি দিতেই তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে রবি ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছিল। ছাদে উঠে মদ্যপানও করে তারা। প্রতিশোধ নিতে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল বিকাশ। ঘর থেকে একটি ধারালো ছুরি নিয়ে এসে সিঁড়ির উপরেই রবির পেটে এলোপাথাড়ি কোপ মেরে পালিয়ে যায় সে। ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেয় রবির সঙ্গে আসা বাকিরাও। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রবির।
হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ মাহাত বলেন, ‘বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কারণেই দু’জনের মধ্যে শত্রুতা চরমে ওঠে। তার জেরে এই খুনের ঘটনা। রবির সঙ্গে আসা বাকি দু’জনের খোঁজ চলছে।’ ফ্ল্যাটের ছাদে প্রায়দিনই মদ্যপান, চিৎকার চেঁচামেচি চলত বলে অভিযোগ প্রতিবেশীদের। স্থানীয়রা বলেন, ‘এর আগেও ছাদে একবার একজনের হাতে কোপ মারা হয়। প্রতিদিনই বহিরাগতরা এসে নেশার আসর বসাত। থানা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ সব জায়গায় অভিযোগ জানিয়েছিলাম আমরা। এই ধরনের কাণ্ড যে ঘটতে চলেছে, আগেই আঁচ পেয়েছিলাম।’