রাতের সল্টলেকে চোর-পুলিশ খেলা, রাজস্থানে খুন করে শহরে গোদারা গ্যাংয়ের শ্যুটার, গ্রেফতার ৩
বর্তমান | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর ও কলকাতা: হঠাৎ বাড়ির ভিতরে অচেনা এক যুবক! কে আপনি? পরিচয় জিজ্ঞাসা করতেই সে বলে ওঠে—‘আপনাদের আবাসনে চোর ঢুকেছে! আমি পুলিশকর্মী। সার্চ করব।’ অথচ, তার পরনে সাধারণ পোশাক! মিনিটখানেকে মধ্যে আরও দু’জন এল ওই বাড়িতে। তাদেরও দাবি, ‘আমরা পুলিশকর্মী! যে ঢুকেছে সে কোথায়?’ কে চোর? কে পুলিশ? ধন্দে পড়ে যান সকলে। ‘চোর, চোর’ চিৎকার করে বেরিয়ে পড়েন আবাসিকরা। ভয় পেয়ে ছাদের কার্নিশে শুয়ে পড়েছিল প্রথম যুবকটি। তারপর সেখান থেকে নীচে ঝাঁপ! তবে, পালাতে পারেনি। আসল পুলিশের হাতেই ধরা পড়ে ‘নকল পুলিশ’। বৃহস্পতিবার রাতে সল্টলেকের আবাসনে এহেন চোর-পুলিশ খেলার পর ধৃতের পরিচয় জেনে সবার চোখ কপালে! ধৃত যুবক আদৌ কোনও চোর নয়, কুখ্যাত রোহিত গোদারা গ্যাংয়ের শার্প শ্যুটার! রাজস্থানে খুন করে পালিয়ে এসেছে কলকাতায়। ফুলবাগান থেকে গ্যাংয়ের আরও দু’জন শ্যুটারকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। যদিও পালাতে সমর্থ হয়েছে জুবের আহমেদ নামে তাদের এক গ্যাং মেম্বার। গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী রোহিত গোদারা। পরে হাত মেলায় গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রারের সঙ্গে। পাঞ্জাবের র্যাপার সিধু মুসেওয়ালা থেকে রাজস্থানে কারনি সেনা প্রধানকে খুনের মাস্টারমাইন্ড রোহিত। অভিনেত্রী দিশা পাটানির বাড়ির বাইরে গুলিচালনার ঘটনাতেও তার গ্যাংয়ের নাম জড়িয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম ধর্মেন্দ্র গুজ্জর, মহেশ গুজ্জর এবং গণপত গুজ্জর। সল্টলেক পূর্বাচল আবাসন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রথমজনকে। বাকি দু’জনকে ফুলবাগান থেকে। তিনজনকে পাঁচ দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়েছে রাজস্থান পুলিশ।
জানা গিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর রাজস্থানের কুচামন থানা এলাকায় জিম মালিক রমেশ রুলানিয়াকে গুলি করে খুন করা হয়। নিজের গাড়ি নিয়ে সেই অপারেশনে গিয়েছিল ধর্মেন্দ্র। জিমের ভিতর নাইন এমএম থেকে প্রথম গুলিটি করেছিল গণপত। দ্বিতীয় গুলি করে মহেশ। সেই খুনের তদন্তে নেমে রাজস্থান-গুজরাতের ৫০০ কিলোমিটার এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বের করে রাজস্থান পুলিশ। সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারপরই জানা যায়, এই খুনের মাস্টার মাইন্ড বীরেন্দ্র চরণ। সে কখনও দুবাইয়ে, কখনও থাইল্যান্ডে ঘুরে বেড়ায়। বীরেন্দ্রই ইন্টারনেট কলে জিম মালিকের কাছে ৫ কোটি টাকা চেয়েছিল। টাকা না দেওয়ায় খুনের জন্য ‘সুপারি’ যায় রোহিত গোদারা গ্যাংয়ের কাছে।
খুনের পর পালিয়ে বেড়াচ্ছিল ধর্মেন্দ্র, মহেশ এবং গণপত। তারা প্রথমে গাড়ি নিয়ে দিল্লি সীমানায় আসে। তারপর জম্মু, হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড হয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতায় ঢোকে। ফুলবাগানে এসে তারা গাড়ি ছেড়ে দেয়। এই তিনজনের সঙ্গে ছিল জুবের। সে খাবার আনতে গিয়েছিল। ঠিক সেই সময় সন্দেহের বশে পুলিশ মহেশ এবং গণপতকে গ্রেফতার করে। ধর্মেন্দ্র পালিয়ে যায়। জুবেরও ফেরেনি। ফুলবাগান থেকে পালিয়ে সল্টলেকের পূর্বাঞ্চলে চলে আসে ধর্মেন্দ্র। পাঁচিল টপকে আবাসনের ক্লাস্টার-৪ বিল্ডিংয়ে এক অধ্যাপক দম্পতির ফ্ল্যাটে ঢুকে যায়। অধ্যাপিকা শুভদীপা মজুমদার বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে ঢুকেই বলে আমি পুলিশ। দেখে সন্দেহ হয়েছিল। তারপরই আরও দু’জন এসে বলে, আমরাও পুলিশ। বুঝতে পারছিলাম না, কে আসল, কে নকল। কারণ, কেউ পুলিশের পোশাকে ছিল না।’ চোর ঢোকার খবর ছড়াতেই সকলে বেরিয়ে আসেন। পূর্বাচলেই থাকেন স্থানীয় কাউন্সিলার মিনু দাস চক্রবর্তী। তিনিও লোকজন নিয়ে দৌড়ে আসেন। ফোন করেন থানাতেও। মিনুদেবী বলেন, ‘কে চোর, কে পুলিশ তখন বুঝতে পারা যাচ্ছিল না। আবাসনের বাইরে আবার পুলিশের গাড়িও ছিল। তাতে ধন্দ আরও বাড়ে।’