অভিষেকের উদ্যোগে ২৪ ঘণ্টায় ৫০ হাজারের বেশি নাম নথিভুক্ত
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত ‘আমি বাংলার ডিজিটাল যোদ্ধা’ উদ্যোগে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি মানুষ নাম নথিভুক্ত করেছেন। মানুষের এই বিপুল সাড়া পেয়ে তৃণমূল শিবিরে এখন উৎসবের মেজাজ। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণ নাগরিক থেকে যুবক-যুবতী, শিক্ষক, গ্রাম পর্যায়ের কর্মীরা সবাই একসঙ্গে এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। এটি এখন প্রকৃতপক্ষে গণজাগরণের রূপ নিতে চলেছে।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ঘোষণার পরই ইন্টারনেটে প্রচার শুরু হয় এবং অভিষেক নিজের তরুণ কর্মীদের নেতৃত্বে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রায় ৩ মিনিটের ভিডিওতে অভিষেকের বক্তব্য, ‘আমাদের মাতৃভূমি, প্রিয় বাংলার অহংকার, ঐতিহ্য ধ্বংস করতে নেমেছে বহিরাগত বাংলা বিরোধী জমিদার বাহিনী। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তারা ডিজিটাল মাধ্যমে মিথ্যা ছড়াচ্ছে। এবার তাই আমাদের যুদ্ধও শুরু হল ডিজিটাল মাধ্যমে। আমাদের উদ্দেশ্য, বাংলার সম্মান, অধিকার ফিরিয়ে আনা। তার জন্য যত দূর লড়তে হয়, লড়ব। সেই কারণে আমি শুরু করছি “আমি বাংলার ডিজিটাল যোদ্ধা” নামে এই ডিজিটাল কর্মসূচি, যা পরিচালনা করবেন দলের তরুণরা। বাংলার আসল পরিচয়, ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে যাতে ভারতের প্রত্যেক প্রান্তে সেই সত্য ছড়িয়ে পড়ে।’
দলের মুখপাত্র জানাচ্ছেন, অভিযানের উদ্দেশ্য কেবল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ নয়; বরং একটি বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে বাংলার সংস্কৃতি, ভাষা ও পরিচয় রক্ষা করাই মূল লক্ষ্য। এই প্রচার অভিযানে শিক্ষাবৃত্তি, স্থানীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ, কৃষকের অধিকার এবং ক্ষুদ্র উদ্যোগ কার্যকরী করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্তরের মানুষের বার্তা সামনে আনা হচ্ছে। তৃতীয় পক্ষের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে ভুল তথ্য ছড়ানো প্রতিহত করার জন্য মডিউলও তৈরি করা হয়েছে বলে দলীয় কর্মীরা জানিয়েছেন।
অভিষেকের ঘোষণার এই ভিডিও প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম। সেখানে তিনি জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন, ‘যাঁরা বাংলাকে এভাবে অপমানিত হতে দেখতে চান না, এটা তাঁদের কাছে সুবর্ণ সুযোগ। ডিজিটাল যোদ্ধা হিসেবে যোগ দিন, বাংলার ভবিষ্যৎ শক্তিশালী করুন।’ এই আহ্বানে সাড়া মিলতেই দলীয় স্তরে তৎপরতা শুরু হয়েছে। জেলার সংগঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলীয় তরুণদের কাজে যুক্ত করেছেন। গ্রাম-গঞ্জ স্তরে কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
কোথাও কোথাও পাঠানদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, ভ্রান্ত সংবাদ ও কুরুচিকর ভাষা প্রচার বন্ধে তথ্য সচেতনতা শিবিরও চালানো হবে। এমন পরিকল্পনার কথাও শোনা যাচ্ছে। তৃণমূল দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, নাম নথিভুক্তির পর আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দলীয় কর্মীকে ডিজিটাল শিক্ষাদান ও ভেরিফিকেশন কাজের জন্য নিযুক্ত করা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার জোরালো হওয়ার আগে ডিজিটাল মঞ্চে তৃণমূলের এই পদক্ষেপ বিন্দু মাত্রই অবাক করার নয়। বরং এটি একটি সুসংগঠিত প্রচারের অংশ। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে একইভাবে ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচি সাফল্য এনে দেয়। অভিষেক নিজে প্রতিটি জেলায় ঘুরে ঘুরে মতামত সংগ্রহ করে দলের জন্য প্রার্থী বাছাই করিয়েছিলেন। এবার সেই কৌশলের উন্নত রূপ ডিজিটাল মাধ্যমে আরও বিস্তৃত আকার নিচ্ছে।
স্থানীয় নেতৃত্ব ও কর্মীরা জানাচ্ছেন, প্রাথমিকভাবে যাঁরা নাম নথিভুক্ত করেছেন, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই যুবক এবং শিক্ষিত কর্মী। কিন্তু পরবর্তী ধাপে গ্রামের অসংগঠিত জনগণকে নিয়েও কাজ করার লক্ষ্য রয়েছে দলের। এই কর্মসূচি সফল হলে তৃণমূল দাবি করবে, জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ ও বাস্তব তথ্য পৌঁছে দেওয়াই হবে তাঁদের রাজনৈতিক শক্তি।
এদিকে অভিষেকের এই ডিজিটাল কর্মসূচির ব্যাপারে বিরোধীরা ইতিমধ্যেই সমালোচনা শুরু করলেও, তৃণমূল বলছে এটি সম্পূর্ণভাবে গণশক্তির ভিত্তিতে গঠিত। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, নাম নথিভুক্তির সংখ্যা জেলাভিত্তিকভাবে বিশ্লেষণ করে পরবর্তী স্ট্র্যাটেজি নির্ধারিত হবে। যাঁরা নিবন্ধন করেছেন, তাঁদের মধ্যে থেকে স্থানীয় পর্যায়ের কার্যকরী টিম গঠন করা হবে।
প্রবীণ রাজনৈতিক কর্মীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সত্য অর্থেই জনসমর্থন সংগ্রহ করতে পারলে তা রাজনৈতিক ময়দানেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে নাম নথিভুক্তির সংখ্যা লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে যাবে। একদিকে অনলাইন ও অন্যদিকে ময়দান– এই দুই স্তরে প্রচার অভিযান একসঙ্গে চালালে ফল অনেক ভালো হবে।