ডাকাতে কালীর পুজোয় আজও মানত পূরণে ভিড় করেন ভক্তরা
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
তখনও রানাঘাট নামকরণ হয়নি। এলাকা ছিল জনমানবশূন্য। যাতায়াত বলতে ভরসা ছিল নদীপথ। রাজত্ব করতেন একজনই। যার নাম শুনলে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত। নাম তার রণ ডাকাত। কেউ কেউ আবার রণা ডাকাতও বলতেন। নদীপথেই চলত লুটতরাজ। ডাকাতির কাজ সফল করতে কালীপুজো করেই ডাকাতি করতে যেতেন রণ ডাকাত সর্দার।
জানা যায়, ১৭৯৯ সাল। পাল চৌধুরী বংশের কৃষ্ণচন্দ্র ও শম্ভুচন্দ্র কিনেছিলেন রানাঘাট পরগনা। তারপরই রানাঘাটের পত্তন হয়। নগর পত্তনের আগে এলাকা রণ ডাকাতের অধীনে ছিল। ছিল তার চূড়ান্ত বাড়বাড়ন্ত। বর্তমান সিদ্ধেশ্বরী তলা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে চূর্ণী নদীর সঙ্গে যুক্ত একটি খাল ছিল। ওই জলপথেই যাতায়াত করতেন ব্যবসায়ীরা। ওই ব্যবসায়ীদের নিশানা করত রণর দল। চলত মূল্যবান সামগ্রী লুঠপাট, এমনকী নরবলিও বাদ যেত না।
সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের সেবায়ত কলিন গাঙ্গুলি বলেন, রণ ডাকাতের আধিপত্য শেষ হওয়ার পর পরবর্তীতে কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নাদেশ পান, অনাদরে রয়েছেন দেবী। তাই তাঁকে উদ্ধার করে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা হোক। রাজার স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী রানাঘাটের ডাকাত কালী প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আজ সিদ্ধেশ্বরী কালী নামে পরিচিত। গড়ে উঠেছে মন্দিরও।
কথিত আছে, সাধক রামপ্রসাদ একবার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁকেও রণর হাতে বন্দি হতে হয়। ডাকাত সর্দার সাধককে বলি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন সাধক মা কালীর উদ্দেশে গান গেয়েছিলেন। সেই গানের সুরে মুগ্ধ হয়েছিলেন ডাকাত সর্দার। প্রাণরক্ষা হয় রামপ্রসাদের।
জানা যায়, ১৩০২ সাল। রাজনারায়ণ কুণ্ডুর ভ্রাতৃজায়া ইছামতি বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এখন সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে কালীমূর্তি ছাড়াও মহাদেব ও রাধা-কৃষ্ণের পুজো হয়।
সামনেই কালীপুজো। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও কালীপুজোর আগে সেজে উঠছে মন্দির। কালীপুজোর দিন বহু মানুষ মনের ইচ্ছা পূরণের আশায় মন্দিরে পুজো দেন। স্থানীয়রা জানান, কালীপুজোর দিন বহু ভক্তের ভিড় এই মন্দিরে হয়। খুবই জাগ্রত সিদ্ধেশ্বরী কালী মা।
মন্দির সূত্রে জানা যায়, রানাঘাটের এই সিদ্ধেশ্বরী কালী মায়ের সঙ্গে রণ বা রণা ডাকাতের নাম জড়িত রয়েছে। এই দেবীর পুজো করত রণ ডাকাত। তিনি ডাকাত সর্দার ছিলেন। তখন এই পুজো মূর্তি তৈরি করে করা হত না। ঘটে বা বেদিতে পুজো করা হত। ডাকাত সর্দারের মৃত্যুর পর এই মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়।
মন্দির সূত্রে আরও জানা যায়, জনশ্রুতি রয়েছে, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নাদেশ পান এই দেবী অবহেলায় পড়ে রয়েছে। তার পরেই তিনি মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন।