• ব্রাত্যর ডাকে শেকড়ের সন্ধানে চঞ্চল
    বর্তমান | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • পুব বাংলার পাবনার পুত্র। নাজিরগঞ্জের নদী, মাঠ, আঙিনার সোঁদা সুবাসে বেড়ে ওঠা মানুষটির কোপাই, খোয়াইয়ের পাড়ে পৌঁছতে লাগল জীবনের একান্ন বছর! ইতিমধ্যে অভিনয় ওপার বাংলার চঞ্চল চৌধুরিকে দিয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এপারও করেছে আপন। তবুও দেখা হয়নি সাধের শান্তিনিকেতন। ব্রাত্য বসুর ছবির শ্যুটিংয়ে এসে পূরণ হল সেই স্বপ্ন।

    শান্তিনিকেতন নয়। বোলপুর থেকেও চার-পাঁচ কিলোমিটার পুবে মোহনপুর গ্রাম। সেখানে সেজে উঠেছে ব্রাত্যর নতুন ছবি ‘শেকড়’-এর কাল্পনিক জোড়া পটভূমি শিমুলপোতা ও সাজির হাট। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দ্রব্যময়ীর কাশীবাস’ ও ‘দাদু’ গল্পের পটভূমি অনুসরণে। দু’টি গল্পের মিশ্রণে ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশনের প্রযোজনায় তৈরি হচ্ছে ছবিটি।

    ঢাকা থেকে এক ডাকে বীরভূমে ছুটে এসেছেন চঞ্চল। রাখঢাক না রেখেই বললেন, ‘রবীন্দ্রনাথ তো শেকড়ই আমাদের।’ দুই হাতে সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে, বাহনটিকে কোমরে ঠেকিয়ে রেখে ছবির অন্যতম মুখ্য চরিত্র ‘ইন্দ্র’র বেশে দাঁড়ালেন। প্রথমবার শান্তিনিকেতন এলেও শ্যুটিংয়ের চাপে গুরুপল্লি, পূর্বপল্লির আনাচে কানাচে সাইকেলে চেপে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ হয়নি। চিত্রনাট্য অনুসারে অয়েল মিলের কর্মী ও শ্রমিক নেতা ইন্দ্র বাড়িতে ফিরে সবে সাইকেলের প্যাডেল থেকে মাটিতে পা রেখেছেন। শট শেষ হতে হাসতে হাসতে বললেন, ‘সাইকেল পেলে আমার আর কিছু চাই না। ইচ্ছে করছে এই সাইকেলটা চালিয়েই হারিয়ে যাই বীরভূমের গ্রামেগঞ্জে। তা তো হবার নয়। ভাবছি পরিচালকের কাছে ছুটির দরখাস্ত দেব।’ অভিনেতার প্রাণখোলা হাসিতে উদাসী বাউলের উচ্ছ্বাস, ‘আমার গ্রামে জন্ম তো। বোলপুরের হোটেল থেকে শ্যুটিং লোকেশনে যাতায়াতের পথে তাই সবুজ মাঠ, গাছপালা দু’চোখ ভরে দেখছি। কংক্রিটের শহর আমার ভালো লাগে না। ঢাকাতে থাকি ঠিকই, কিন্তু যখন গ্রামের বাড়ি যাই তখন মনে হয় বেঁচে আছি।’ মাইকে ভেসে এল ‘শট রেডি’। ফের ‘ইন্দ্র’র খোলসে ঢুকলেন চঞ্চল।

    উঠোনের ধারে দেওয়ালে সাইকেলটা ঠেস দিয়ে রেখে দাওয়ায় উঠে ঘরে ঢুকলেন ‘ইন্দ্র’। ‘কাট...ওকে’ বলে উঠলেন ব্রাত্য। ঘর থেকে বেরিয়ে দাওয়ায় বসলেন ছবির শ্রমিক নেতা। বললেন, ‘অ্যালঝাইমার্স রোগে আক্রান্ত বাবা রাখাল (লোকনাথ দে), স্ত্রী মিনতি (জয়তী চক্রবর্তী), ছেলে অলককে নিয়ে (ঋদ্ধি সেন) আমার টানাপোড়েনের সংসার। আসলে সম্পর্কের শেকড়ের গল্প। সম্পর্কের মেঠো গন্ধের টানেই এই ছবি করতে রাজি হয়েছি।’ ব্রাত্যর বিশ্লেষণ, ‘মানুষকে তার শেকড়ে ফিরতে হবে। সেটা মানবিকতার শেকড় হতে পারে, প্রেমের-ভালোবাসার শেকড়, শ্রদ্ধার শেকড়ও হতে পারে। এই অনুভূতিগুলো ক্ষয়ে গিয়েছে। সেগুলোকে মাজা-ঘষা করে আবার প্রত্যেকটি মানুষকে পুনরাবিষ্কার করতে হবে।’ বিভূতিভূষণের দুই গল্পে অনুভূতির একই শেকড় কীভাবে শাখা বিস্তার করবে? ‘সেটা জানার জন্য আগামী মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে’, হাসিমুখে পরিচালকের জবাব। তখনই জানা যাবে লোকনাথ দে, সীমা বিশ্বাস, চঞ্চলের সম্পর্কের রসায়ন।
  • Link to this news (বর্তমান)