• মাওবাদী সন্ত্রাসে ‘বড় জয়’, দাবি প্রধানমন্ত্রী মোদির - ২৪ ঘণ্টায় ৩০৩ মাওবাদীর আত্মসমর্পণ, ‘এটাই নতুন ভারতের পরিবর্তনের প্রতীক’
    আজকাল | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশজুড়ে মাওবাদী দমন অভিযানে ‘ঐতিহাসিক সাফল্য’ অর্জনের দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার রাতে এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড সামিট ২০২৫-এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০৩ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার ‘দেশীয় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান’ নিয়েছে এবং ‘রক্তপাতের যে দীর্ঘ ইতিহাস’, তা শেষ করার প্রয়াস চলছে।

    মোদি বলেন, “গত ৫০-৫৫ বছরে হাজার হাজার মানুষ মাওবাদী সন্ত্রাসে প্রাণ হারিয়েছেন। এই নকশালরা স্কুল-হাসপাতাল গড়তে দিত না, চিকিৎসকরা যাতে গ্রামে যেতে না পারেন, তার জন্য হামলা চালাত, প্রতিষ্ঠান উড়িয়ে দিত। মাওবাদী সন্ত্রাস যুবসমাজের প্রতি এক ভয়ঙ্কর অন্যায় ছিল।”

    তিনি আরও যোগ করেন, “আমি বহুবার ভিতরে ভিতরে ক্ষুব্ধ হতাম। আজ প্রথমবার সেই বেদনা আমি প্রকাশ করছি।”

    সামিটে উপস্থিত ছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হারিনি আমারাসুরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট এবং ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। আন্তর্জাতিক এই পরিসরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ‘ভ্রান্ত পথে যাওয়া তরুণদের’ মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছে, এবং এখন সেই প্রচেষ্টার ফল দেশবাসী দেখছে।

    মোদি জানান, “এরা সাধারণ মানুষ নয়। এদের মাথার দাম ঘোষণা করা ছিল, আর আত্মসমর্পণের সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে।”

    তিনি আরও দাবি করেন, সরকারের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় গত এক দশকে দেশে মাওবাদী প্রভাবিত জেলার সংখ্যা ১২৫ থেকে কমে মাত্র ১১-তে নেমে এসেছে।

    চত্তিশগড়ে বৃহস্পতিবারই ১৭০ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন, যা সাম্প্রতিক বছরের অন্যতম বড় ঘটনা। এর মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রূপেশ ওরফে সত্যীশ কোফা। তিনি আত্মসমর্পণ করলেও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁর লক্ষ্য “জনগণের সংগ্রামের পথ পরিবর্তন করা”, আত্মসমর্পণ নয়।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগে যখন খবর আসত, তা হত গাড়ি বিস্ফোরণ বা নিরাপত্তারক্ষীদের মৃত্যু নিয়ে। আজ বসতারে যুবকেরা ‘বসতার অলিম্পিকস’ আয়োজন করছে। এটাই পরিবর্তনের সূচক। আজ তারা দীপাবলি উদযাপনের সুযোগ পাচ্ছে।”

    প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, কংগ্রেস আমলে এমন একটি “আরবান নকশাল” ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছিল যা মাওবাদী হিংসার খবর দেশবাসীর কাছে পৌঁছাতে দিত না।

    তিনি বলেন, “একটা বিশাল সেন্সরশিপ ব্যবস্থা চালু ছিল। যারা কংগ্রেস শাসনে সমৃদ্ধ হয়েছিল, যারা প্রতিষ্ঠানের দখল নিয়েছিল এবং নিজেদের ‘আরবান নকশাল’ বলত, তারা মাওবাদী সন্ত্রাসের উপর পর্দা টেনে রাখত।”

    মোদি জানান, সম্প্রতি মাওবাদী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কিছু মানুষ দিল্লিতে এসে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন। “কেউ পা হারিয়েছে, কেউ হাত, কেউ চোখ। তারা সাত দিন ধরে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেছে তাদের কথা শুনতে। কিন্তু কেউ তাদের কণ্ঠস্বর শোনেনি। কংগ্রেস আমলে এই আলোচনা পুরোপুরি দমন করা হয়েছিল,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।

    বক্তৃতার শেষে আবেগঘন কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে অঞ্চল এতদিন ভয় ও মৃত্যুতে জর্জরিত ছিল, সেখানে এবার দীপাবলি আলোর উৎসব হয়ে উঠবে। বহু মা প্রথমবার ২৫ বা ৫০ বছর পর আলোর উৎসব দেখবেন। তেরঙা ওড়বে, আনন্দের প্রদীপ জ্বলবে।”

    তিনি ঘোষণা করেন, “যে দিন দেশ সম্পূর্ণভাবে নকশালবাদ থেকে মুক্ত হবে, সে দিন আর দূরে নয়। এটাই মোদীর গ্যারান্টি।”

    বিশেষজ্ঞমহলের মতে, এই আত্মসমর্পণ শুধু প্রশাসনিক সাফল্য নয়, বরং এক গভীর সামাজিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে। তবে অনেকে সতর্ক করে বলেছেন, “শুধু অস্ত্র ফেলা যথেষ্ট নয়, মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানই হবে প্রকৃত সমাধান।”
  • Link to this news (আজকাল)