• ট্রেন্ডিং মিঠাই প্রদীপ, রাজস্থানের হস্তী দীপ! পুরুলিয়ায় জমজমাট দীপাবলির ব্যবসা
    প্রতিদিন | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ‘দীপালিকায় জ্বালাও আলো…’ নাকি মিষ্টিমুখেও দীপের আলো? ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা প্রান্তিক পুরুলিয়ায় দীপাবলির বাজারে ট্রেন্ডিং মিঠাই প্রদীপ। কথাটা শুনতে অদ্ভুত লাগছে? কিন্তু এটাই যে সত্যি। শনিবার ধনতেরাসের কেনাকাটার পর যখন প্রদীপের বাজারে পা রাখবেন পুরুলিয়া শহরে, তখন এসব প্রদীপের সমাহার দেখতে পাবেন শহরের বিভিন্ন স্টেশনারি দোকানে। যাঁরা শহর পুরুলিয়ায় ধনতেরাসের কেনাকাটা আগেভাগেই শুরু করে দিয়েছেন, তাঁরা এই মিঠাই প্রদীপ ইতিমধ্যেই ঘরে এনেছেন।তবে সেই সংখ্যা অনেকটাই কম। গত বুধবার থেকে এই প্রদীপ পুরুলিয়ার বাজারে এসেছে। এখনও ভালোভাবে বিভিন্ন বিপনিতেও আসেনি। তবে যাঁদের নজরে পড়েছে, তাঁরা এই প্রদীপ কিনতে একটুও দ্বিধা করেননি।

    দীপাবলির আলো জ্বালানোর সময় যদি জিভে জল চলে আসে, সত্যিই কিছু করার নেই। বলছেন এই শহরে প্রদীপ বিক্রি করা দোকানের মালিকরা। কারণ যোধপুর লাড্ডু যেমন হয় হলদে রঙের। ঠিক হুবহু তেমন আকৃতিতে প্রদীপের সলতে। যা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে জিলিপি ও কাজু বরফির আকৃতিতেও প্রদীপের সলতে জুড়ে দিয়ে তৈরি হয়েছে এই মিঠাই প্রদীপ। 

    তবে মিষ্টিমুখে প্রদীপ জ্বালানোর পাশাপাশি পুরুলিয়ার বনমহলে এবার ট্রেন্ডিং রাজস্থানের হস্তি প্রদীপ।সেটা ঠিক কীরকম? রাজস্থানের হস্তশিল্পে যে শিল্পকলা থাকে, যে উৎসবের রং থাকে, ঠিক সেই ধাঁচেই শুঁড় তোলা হাতির উপর প্রদীপের সলতে। সেই হস্তী প্রদীপের কতই না রং! লাল, গোলাপি, হলুদ, সবুজ, কমলা ? দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া হাতি সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি, বুদ্ধি, শক্তির প্রতীক। ফলে প্রদীপ কেনার মধ্য দিয়ে একটা আলাদা আধ্যাত্মিক অনুভবে হস্তী প্রদীপ পুরুলিয়ায় রীতিমতো ট্রেন্ডিং হয়ে গিয়েছে এই দীপাবলিতে। হিন্দু ধর্মে গণেশকে হাতির মাথায় অধিষ্ঠিত রূপে পূজা করা হয়। যার মধ্য দিয়ে জ্ঞান, বুদ্ধি, শুভ প্রভাব বিকশিত হয়। সেইসঙ্গে গজলক্ষ্মীর রূপে লক্ষ্মীর সঙ্গে হাতির একটা আলাদা সম্পর্ক রয়েছে। যা সমৃদ্ধির প্রতীক।

    দীপাবলিতেও অনেক জায়গায় দীপান্বিতা লক্ষ্মীপূজা হয়। ফলে এই প্রদীপের কদরই আলাদা। পুরুলিয়া শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে একটি নামকরা স্টেশনারি দোকানের মালিক নরেশ ফোগলার কথায়, “হস্তী প্রদীপ পুরুলিয়ায় এবার রীতিমতো ট্রেন্ডিং। এই প্রদীপে ‘রাজস্থানি লুক’ রয়েছে। এত রঙবাহারি যে সহজেই চোখ টানছে। তাছাড়া হাতির পিঠে প্রদীপ একটা আলাদা অর্থ বহন করছে। এছাড়া মিঠাই প্রদীপের বাজারও ব্যাপক। এগুলো সবই প্রিমিয়াম। এখনও এগুলো দোকানের সামনে প্রদর্শন করিনি। ধনতেরাস তিথি পড়ার পর থেকেই করব।” এই প্রদীপগুলির একেকটির দাম ৩০ টাকা। যোধপুর লাড্ডু মিঠাই প্রদীপের দামও একই। ওই প্রদীপগুলো প্যাকেট করে বিক্রি হচ্ছে। চারটি প্রদীপ নিয়ে একটি প্যাকেট। একইভাবে জিলিপি, কাজুর বরফি মিঠাই প্রদীপের দামও ১২০ টাকা। প্রত্যেকটি প্যাকেটে চারটি করেই থাকছে।

    তাহলে কি এই ফ্যাশনেবল প্রদীপের কাছে হারিয়ে যাচ্ছে মাটির প্রদীপ? স্টেশনারি দোকানের কর্ণধার বলেন, “আমি মাটির প্রদীপ বিক্রি করি না। তবে কোনও ট্র্যাডিশন কিন্তু হারিয়ে যায় না। বরং কয়েক বছর ধরে দেখছি মাটির প্রদীপের বিক্রি বেড়েছে। আগেই এই প্রদীপের বিক্রি একেবারে তলানিতে ঠেকে গিয়েছিল। কিন্তু এবার বেশ ভালো।” পোস্ট অফিস মোড়ের ফুটপাতেই ১০ টাকায় আটটি করে মাটির প্রদীপ মিলছে। আর একদম ছোট প্রদীপের দাম মাত্র এক টাকা। কোটলয় গ্রামের রাকেশ কুমার, পুরুলিয়া শহরের ভাটবাঁধের সন্তোষ কুমার বলছেন, “মাটির প্রদীপের বিক্রি কয়েক বছর আগে একেবারেই ছিল না। আবার যেন ওই প্রদীপের দিকেই একটু একটু করে ঝুঁকছেন মানুষজন।” এই মাটি দিয়েই এই জেলার পুতুল প্রদীপ বিখ্যাত। তারও বিক্রি মন্দ নয়। সবে মিলিয়ে পুরুলিয়া শহর, রেল শহর আদ্রা, রঘুনাথপুর, ঝালদা, মানবাজারে দীপাবলির বাজার বেশ জমজমাট। তবে দীপাবলির বাজার সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে পুরুলিয়া শহরে। ঝালর, বন্দরবার, স্টিকার, আলপনা, রঙ্গোলির উপকরণে এই দীপাবলিতে গৃহস্থালি সাজাতে কেনাকাটা চলছে ব্যাপক।

    প্রদীপের পাশাপাশি মটকা ক্যান্ডেলও নজর কাড়ছে। ওই মোমবাতির একটি প্যাকেটে রয়েছে ১২ টি। যার দাম ১৮০ টাকা। চারটির দাম ৭৫ টাকা। এছাড়া ৯০ ও ১৮০ টাকারও প্যাকেট রয়েছে। রংবাহারি ঝালর দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। যার দাম ২৫০ থেকে ৬০০ টাকা। আলপনার স্টিকার রয়েছে ৬০ থেকে ১০০ টাকার। এছাড়া অন্যান্য স্টিকার ৫০ থেকে ১০০ টাকায়। রঙ্গোলি সাজাতে দশটি রঙের দাম ১৭০ টাকা। পুরুলিয়া শহরের আমলা পাড়ার কিশোরী, স্কুল ছাত্রী শ্রেয়া চন্দ্র বলে, “আমি রঙ্গোলি সাজানোর জন্য পুরুলিয়া শহরের বাজারে এসেছিলাম। প্রদীপের কেনাকাটা বাড়ির বড়রা করবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু এমন সব প্রদীপ দেখলাম যা একেবারে নতুনত্ব। মিঠাই প্রদীপ, হস্তীপ্রদীপ না কিনে তাই পারলাম না।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)