• রাখে হরি মারে কে! ঘণ্টাখানেক কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে ফিরলেন বধূ
    প্রতিদিন | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: রাখে হরি মারে কে? একথাই যেন খেটে গেল পাথরপ্রতিমার প্রণতি প্রামাণিকের জীবনে। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে সুন্দরবনের নদীতে কাঁকড়া, মাছ ধরতেন তিনি। আজ, শনিবার সকালেও নদীতে নেমে সেই কাজ করছিলেন। সেসময়ই পিছন থেকে একটি প্রকাণ্ড কুমির তাঁকে আক্রমণ করে। কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে ফিরলেন প্রণতি। তিনি এই মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর শরীরের একাধিক জায়গায় ক্ষত রয়েছে। তাঁর অসীম সাহসিকতার প্রশংসা করছেন স্থানীয়রা।

    ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার বনশ্যামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অশ্বিনী মাইতির খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায়। বছর ৩৭-এর প্রণতি প্রামাণিক ওই এলাকারই বাসিন্দা। তাঁর স্বামী গৌতম প্রামাণিক পরিযায়ী শ্রমিক। গ্রামের বাড়িতে দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে থাকেন প্রণতি। সংসারে আর্থিক দারিদ্র দীর্ঘদিনের। দুই কন্যা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। মেয়েদের পড়াশোনার খরচের সঙ্গে সংসার চালাতে কার্যত হিমশিম খেতে হয় ওই দম্পতিকে। সেজন্য নিত্যদিন নদীতে কাঁকড়া, মাছ ধরতে যান প্রণতি। এদিনও সকালে অশ্বিনী মাইতির খেয়াঘাট সংলগ্ন জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন ওই গৃহবধূ। সরু সুতোয় টান পড়ায় ছাঁকনি জাল নিয়ে নদীতে নেমেছিলেন তিনি।

    নদীর জলের দিকে স্থির দৃষ্টিতে ছিলেন ওই বধূ। চুপিসাড়ে পিছনে যে মূর্তিমান বিপদ এসে পড়েছে, তা তিনি খেয়ালই করেননি। একটি বিশালকার কুমির পিছন থেকে প্রণতিকে আক্রমণ করে। তাঁকে টেনে গভীর জলে নিয়ে যেতে চায় সেটি। লড়াই না করলে বেঁচে ফেরা মুশকিল, বুঝতে পেরেছিলেন তিনি। ফলে নদীর পারে ওঠার চেষ্টা করেন ওই বধূ। এদিকে কুমিরটিও তাঁকে কামড় দিয়ে আরও টেনে ধরার চেষ্টা করছে। সেসময়ই নদীর পাড়ে একটি গাছ খেয়াল করেন প্রণতি। কোনওরকমে সেই গাছটিকেই আঁকড়ে ধরেনি তিনি। পরনের কাপড়টিকে গাছের সঙ্গে জড়িয়ে নেন তিনি।

    এদিকে কুমিরটিও ওই মহিলাকে জলে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। মুখের শিকার যেন সেও ছেড়ে দিতে নারাজ। একাধিক কামড় ও লেজের আঘাতে প্রণতিকে ক্রমাগত ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে সেটি। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে কুমিরের সঙ্গে লড়াই চলতে থাকে। এদিকে বাঁচার জন্য ক্রমাগত আর্তনাদ করতে থাকেন প্রণতি। তাঁর আর্ত চিৎকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কানে শেষপর্যন্ত পৌঁছয়। দল বেঁধে স্থানীয়রা নদীর ধারে লাঠিসোঁটা নিয়ে হাজির হয়। কুমিরটিকে তাড়ানোর চেষ্টা চলে। শেষপর্যন্ত উপায় না দেখে কুমিরটি মুখের শিকার ছেড়ে নদীতে নেমে যায়।

    দ্রুত ওই মহিলাকে উদ্ধার করে পাথরপ্রতিমা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয় তাঁর। শরীরের একাধিক জায়গায় ক্ষত রয়েছে বলে খবর। প্রণতির অসীম সাহসের কথা লোকমুখে ছড়িয়েছে এলাকায়। সকলেই তাঁর সাহসিকতাকে কুর্নিশ করেছেন। বিপদ অনেকটাই কেটে গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না ওই মহিলার।
  • Link to this news (প্রতিদিন)