ওমানে প্রতারণার মুখে বাংলার ১১ পরিযায়ী শ্রমিক, পাশে নবান্ন
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৯ অক্টোবর ২০২৫
ওমানে কাজ করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন মুর্শিদাবাদের ১১ জন পরিযায়ী শ্রমিক। বেসরকারি সংস্থার দ্বারা প্রতারিত হন তাঁরা। কেড়ে নেওয়া হয় শ্রমিকদের পাসপোর্ট, ভিসা। এমনকি খাবার কেনার টাকাও শেষ হয়ে যায়। চিন্তায় ঘুম উড়েছিল তাঁদের পরিবারের সদস্যদের। সেই খবর পেয়ে শ্রমিকদের সাহায্যে সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয় রাজ্য সরকার। আপাতত ওই পরিযায়ী শ্রমিকেরা ওমানে ভারতীয় দূতাবাসের নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন। কেন্দ্রের কাছে রাজ্য সরকার আবেদন জানিয়েছে যাতে দ্রুত ওই শ্রমিকদের বাংলায় ফিরিয়ে আনা হয়।
সমাজমাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে, ‘কর্মসূত্রে ওমানে যাওয়া মুর্শিদাবাদের ১১ জন পরিযায়ী শ্রমিক একটি অসাধু নিয়োগ সংস্থার দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়ে ওখানেই আটক হয়ে পড়েছিলেন। সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় তাঁরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন।…রাজ্য সরকারের সক্রিয় প্রচেষ্টার ফলে মানুষগুলো এখন ওমানে ভারতীয় দূতাবাসের হেফাজতে আছেন, যেখানে তাঁদের খাবার ও থাকার সুব্যবস্থা করা হয়েছে।’
বিদেশ মন্ত্রকের কাছে নবান্নের আবেদন, ‘এটা বিদেশ মন্ত্রকের বিষয়। সেজন্যে একটা পদ্ধতির মাধ্যমে আমাদেরকে অভিযোগ জানাতে হয়। জীবিকার সন্ধানে বাড়ি ছেড়ে আসা এই মানুষগুলো এখন তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য সাহায্য চেয়েছেন। আমরা আশা করি, বিদেশমন্ত্রক এই বিষয়ে দ্রুত এবং মানবিক পদক্ষেপ করবে, যাতে তাঁরা নিরাপদে দেশে ফিরে আসতে পারেন।’
এর আগে ওই শ্রমিকদের পাশে থাকার আশ্বাস দেয় রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ। আটকে থাকা শ্রমিক সুনীল দাসের বাড়িতে যান রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের অফিসাররা এসে পরিবার থেকে অভিযোগ নিয়েছেন। তাও জেলাশাসকের মাধ্যমে মুখ্যসচিবকে জানানো হয়। বিষয়টি ইতিমধ্যেই বিদেশ মন্ত্রককে জানানো হয়েছে।’
ওই ১১ জন শ্রমিকের বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি, ভরতপুর, বেলডাঙা ও নবগ্রাম থানা এলাকার। তাঁদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে লক্ষাধিক টাকা দিয়ে দালাল মারফত ওমানে কাজে গিয়েছিলেন তাঁরা। কেউ ঋণ করে, কেউ বাড়ির গৃহপালিত পশু বিক্রি করে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে প্রথম সাতমাস বেতন পেলেও পরে তাঁদের আর কোনও বেতন দেওয়া হচ্ছিল না। এই নিয়ে প্রতিবাদ জানালে আগস্টের শেষ সপ্তাহে তাঁদের ঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
গোটা বিষয়টি জানাজানি হতেই বহরমপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এগিয়ে আসে। রাজ্য প্রশাসনও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে। অবশেষে নবান্নের তৎপরতায় ওই শ্রমিকরা ওমানের ভারতীয় দূতাবাসের আশ্রয় পান। তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছে রাজ্য সরকার। অবশ্য এটাই প্রথম নয়, কর্মসূত্রে ভিনরাজ্য বা অন্য দেশে গিয়ে যখনই বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা বিপদে পড়েছেন, তখনই এগিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার।