• পাহাড়ে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ, প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৯ অক্টোবর ২০২৫
  • ফের কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত চরমে। এবার গোর্খাল্যান্ডে কেন্দ্রের মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই পাহাড়ে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি নিয়োগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। চিঠিতে নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে প্রতিবাদ জানিয়ে কড়া ভাষায় প্রধানমন্ত্রী মোদী মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি ‘অবাক এবং বিস্মিত’।

    শনিবার সাউথ ব্লকে ওই চিঠি পাঠিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে তাঁর অভিযোগ, গোর্খা সম্প্রদায় এবং গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-র বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার পঙ্কজ কুমার সিংকে কেন্দ্র সরকার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ করেছে। অথচ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে লিখেছেন, ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সরাসরি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে। এই অঞ্চলের প্রশাসনিক স্থিতাবস্থা ও শান্তি রক্ষা রাজ্যের দায়িত্ব। কেন্দ্রের এই এক তরফা পদক্ষেপ সহায়ক নয়  বরং সংবিধানের সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী।‘

    স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, শুক্রবার গোর্খাদের দীর্ঘদিনের দাবি-দাওয়াগুলি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য রাজস্থান ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তাকে নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি একজন অভিজ্ঞ জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। তাঁর সীমান্ত নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক বিষয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে এই নিয়োগের আগে নবান্নের সঙ্গে দিল্লির কোনও আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যা। এই পদক্ষেপ দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত বলে মনে করছেন তিনি। এতে পাহাড়ে শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে মমতার অনুরোধ, পঙ্কজ কুমার সিংহর নিয়োগের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে তা প্রত্যাহার করা হোক।

    চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১১ সালের ১৮ জুলাই দার্জিলিংয়ে তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কেন্দ্র, রাজ্য ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, এই তিন পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তির ভিত্তিতেই গঠিত হয়েছিল জিটিএ। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ি অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত উন্নয়ন এবং জাতিগত পরিচয় রক্ষা করা। ২০১১ সালে রাজ্যে সরকারে আসার পর থেকেই পাহাড়ে শান্তি এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে তাঁর সরকার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, চিঠিতে উল্লেখ মুখ্যমন্ত্রীর।

    চিঠিতে স্পষ্ট ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘গোর্খা সম্প্রদায় বা জিটিএ-র সঙ্গে যুক্ত কোনও উদ্যোগ রাজ্য সরকারের সঙ্গে পূর্ণ পরামর্শ করেই করা উচিত। একতরফা কোনও পদক্ষেপ এই সংবেদনশীল অঞ্চলের শান্তি ও সম্প্রীতির পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে।‘   কেন্দ্রের নিয়োগ সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছন তিনি। সেই সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী প্রত্যাহার করার জন্য আবেদনও জানিয়েছেন। মমতার বক্তব্য,  ‘ফেডারেল কাঠামো ও কেন্দ্র-রাজ্য পারস্পরিক সম্মানের প্রকৃত চেতনার সঙ্গেই এটা  যুক্ত’।

    গোর্খারা দীর্ঘদিন ধরেই পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি জানাচ্ছে। পাহাড়, তরাই-ডুয়ার্স কিংবা উত্তরবঙ্গের আরও কিছুটা অংশ নিয়ে আলাদা গোর্খাল্যান্ড ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী কার্যত অসম্ভব। সে জন্য ষষ্ঠ তফসিলির আওতায়  আরও বেশি স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়েছেন গোর্খারা। বিজেপিও দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নির্বাচনের আগে গোর্খাদের এই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে আশ্বাস দিয়ে আসছে। এরফলে ২০০৯ সাল থেকে প্রতি নির্বাচনে বিজেপি সাংসদদের জেতাচ্ছে পাহাড়বাসী। অন্যদিকে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের পাহাড়ের ঢালাও উন্নয়ন এবং বিভিন্ন জনজাতির জন্য আলাদা বোর্ড গঠন করে তাঁদের দাবিদাওয়া পূরণ করেছে। এই পরিস্থিতিতে ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে পাহাড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যস্থতাকারী নিয়োগকে অনেকেই রাজনৈতিক চাল বলে মনে করছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)