শতাব্দীর ভাষণের সময় ‘দ্বিখণ্ডিত’ তৃণমূল, উঠল কেষ্ট এবং কাজলের নামে আলাদা স্লোগান, বিরক্ত সাংসদ
আনন্দবাজার | ১৮ অক্টোবর ২০২৫
অনেক দিন পর একই মঞ্চে বীরভূম জেলা তৃণমূলের তিন গুরুত্বপূর্ণ মুখ— অনুব্রত মণ্ডল, শতাব্দী রায় এবং কাজল শেখ। ব্যক্তিগত দূরত্ব ঘুচিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে তাঁরা সকলে এক হয়ে লড়ছেন, সেই বার্তা দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু তাল কাটল কর্মীদের সৌজন্যে! দুই নেতার নামে আলাদা আলাদা স্লোগান তুললেন তাঁরা। যা দেখে এবং শুনে বিরক্ত হলেন বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী। অন্য দিকে, কেষ্টর বক্তব্যে বীরভূমের জেলা সভাধিপতি কাজলের কথা থাকলেও কাজলের ভাষণে জেলা কোর কমিটির আহ্বায়কের নাম শোনা গেল না।
কাজল, কেষ্ট এবং শতাব্দী শেষ কবে কোন মঞ্চে একসঙ্গে থেকেছেন, মনে করতে পারছেন না অনেকেই। আসলে শতাব্দী এবং কাজলের সঙ্গে কেষ্টর সম্পর্কের সমীকরণ বরাবরই ‘মধুর।’ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা নেতৃত্বকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে চলার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই অনুযায়ী আয়োজনও হয়েছিল। শনিবার মুরারই-১ ব্লকে দলীয় বিজয়া সম্মিলনীতে বীরভূম তৃণমূলের তিন গুরুত্বপূর্ণ মুখ একত্রিত হয়েছিলেন। বসে ছিলেন পাশাপাশিই। তবে দূরত্ব মিটল কই!
জেলা তৃণমূল কোর কমিটির আহ্বায়ক অনুব্রত স্বল্প কথায় তাঁর ভাষণ সারেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে সিউড়ি যেতে হবে। ৭টার মিটিংটা ধরতে হবে। সকলকে শুভ বিজয়া...।’’ একে একে শতাব্দী, কাজলদের নাম করে ধন্যবাদ জানান তিনি। এর পর শতাব্দী মাইক্রোফোন ধরেছেন সবে। ঠিক তখনই সেখানে উপস্থিত হন কাজল। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় স্লোগান-যুদ্ধ।
মঞ্চের সামনে বসা কেউ কেউ চিৎকার করলেন ‘অনুব্রত মণ্ডল জিন্দাবাদ’ বলে। অন্য পক্ষ তখন শুরু করলেন ‘কাজল শেখ জিন্দাবাদ’ স্লোগান। শতাব্দীর কথা ছাপিয়ে তখন দুই নেতার নামে স্লোগান-যুদ্ধ তুঙ্গে। অস্বস্তিতে পড়েন মঞ্চে আসীন প্রত্যেকেই। নেতাদের সকলেই হাত নেড়ে থামতে বলেন কর্মী এবং সমর্থকদের। কিন্তু স্লোগান-যুদ্ধ চলতেই থাকে। দৃশ্যতই বিরক্ত শতাব্দী মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে খানিক ক্ষণ চুপ করে যান। খানিক পরে সাংসদ বলেন, “আমরা সবাই তৃণমূল করি। আমাদের লড়াই কংগ্রেস, বিজেপি আর সিপিএমের বিরুদ্ধে হওয়া উচিত।”
একটা সময়ে স্লোগান থামে। কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজন তখন প্রকাশ্যে। লক্ষ্য ছিল বিজয়া সম্মিলনীর মাধ্যমে নেতৃত্বের একতা বোঝানো। কিন্তু কর্মীদের আলাদা আলাদা স্লোগানে পুরনো বিরোধই আরও স্পষ্ট হল বলে মনে করছেন অনেকে।