• নীতীশ-চিরাগ ‘যুদ্ধ’, বিহারে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কায় এনডিএ
    বর্তমান | ১৯ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: আসন সমঝোতা নিয়ে বিরোধী মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’ নাজেহাল এবং বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-তে অল ইজ ওয়েল? একেবারেই নয়! আপাতভাবে মনে হচ্ছে মসৃণভাবে সমাপ্ত হয়েছে এনডিএ জোটের আসন সমঝোতা পর্ব। কিন্তু আড়ালে রয়ে গিয়েছে প্রবল টানাপোড়েন এবং ইগোর লড়াই। আরও দ্বিগুণভাবে তা ছায়া ফেলতে চলেছে ভোটপর্বেও। কারণ, নীতীশ কুমার বনাম চিরাগ পাসোয়ানের ‘যুদ্ধ’। তাতেই এনডিএ শিবিরে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা চরমে। যে ২৯ আসনে চিরাগের দল লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস) লড়াই করছে, তার মধ্যে পাঁচটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তাঁর কাকা পশুপতিনাথ পরশের দলও। বাখড়ি, সাহিবপুর কামাল, চেনারি, গার্খা এবং মহুয়া—এই পাঁচ আসনে পাসোয়ান ও মহাদলিত ভোট ভাগ হয়ে যেতে পারে কাকা ও ভাইপোর মধ্যে। তবে সবথেকে তীব্র জল্পনা হল, পশুপতিনাথের দলকে এই পাঁচ আসনে পিছন থেকে সাহায্য করবে নীতীশ কুমারের জেডিইউ। কেন? সহজ উত্তর, যাতে চিরাগের নাক কাটা যায়!

    আবার নীতীশের কোটার গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি আসন হল মোরওয়া, সোনবর্ষা, আলাউলি, একমা এবং রাজগীর। সেগুলি বিজেপি প্রায় দিয়ে দিয়েছিল চিরাগকে। কিন্তু নীতীশ কুমার অনড় থাকেন এবং শেষপর্যন্ত আসনগুলি ছিনিয়ে নিজের কাছে রাখতে সক্ষম হন। পালটা চিরাগ এবার ওই পাঁচটি আসনে জেডিইউকে হারাতে বদ্ধপরিকর। রামবিলাস পাসোয়ান-পুত্রের গোপন রাগ হল, তাঁর ভাগে যে ২৯ আসন এসেছে, সেগুলির সিংহভাগই দুর্বল। এর পিছনে নীতীশ কুমারের কলকাঠি রয়েছে। আবার নীতীশের বার্তা হল, যাঁর কাছে একটিও বিধায়ক নেই, তাঁকে বিজেপি এত গুরুত্ব দিচ্ছে কেন? সেটাও আবার আমাকে অপমান করে? অতএব বিজেপিকে শিক্ষা দিতে হবে। 

    বিহার বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে গেরুয়া শীর্ষ নেতৃত্ব প্রাণপণে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, এখন আর নীতীশ সেরাজ্যে এনডিএ-র ‘বিগ ব্রাদার’ নয়। বিজেপি এবং জেডিইউ দু’দলই সমান। সেই কারণেই বারবার একটি হলেও বেশি আসন দাবি করা সত্ত্বেও নীতীশকে সমসংখ্যক আসনই দিয়েছে গেরুয়া শিবির। ১০১টি। এই ফর্মুলা আদতে বিহারের এনডিএ রাজনীতির সমীকরণ বদলের বৃহৎ বার্তা। তার উপর চিরাগকে জামাই আদর করায় বিশেষ ইঙ্গিত গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। দু’টি বিষয়ই ক্ষুব্ধ করেছে নীতীশ কুমারকে। ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে আসন সমঝোতা না হওয়ায় চিরাগ এনডিএ ভেঙে বেরিয়ে যান। এককভাবে লড়াই করে এবং ভোট বিভাজন ঘটিয়ে সবথেকে বেশি ক্ষতি করেন নীতীশ কুমারের। রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, এতে নাকি বিজেপিরও সায় ছিল। সেই কারণেই ১১৫ আসনে লড়াই করেও জেডিইউ মাত্র ৪৩ আসনে জয়ী হয়। অথচ বিজেপি ১১০ আসনে প্রার্থী দিয়ে জেতে ৭৪ আসনে। তাই এবার ২০২০ সালের বদলা নিতে মরিয়া নীতীশ। একইসঙ্গে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকেও শিক্ষা দেওয়া তাঁর নিশানায়। 

    যদিও প্রকাশ্যে উভয়েই মিত্রতার বার্তা দিচ্ছে। শনিবার চিরাগ পাসোয়ান বলেছেন, ‘বিজেপি এবং জেডিইউ উভয়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তারা বড় মনের পরিচয় দিয়েছে। এবার এনডিএ জোট জয়ী হবে বিপুলভাবে।’ কিন্তু এটা কি চিরাগের মনের কথা? এই চর্চাই তুঙ্গে।
  • Link to this news (বর্তমান)