নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: বাথরুমে পোশাক বদলানোর সময় অসাবধানতাবশত হাতের চ্যানেল খসে গিয়ে প্রচুর রক্তপাত হয়েছিল। তারপরই মাথা ঘুরিয়ে পড়ে তরুণী চিকিৎসক শালিনী দাসের(২৯) মৃত্যু হয়। বাথরুম থেকে বেরিয়ে বিছানার সামনে মায়ের কাছেই লুটিয়ে পড়েন শালিনী। শুক্রবার তমলুকের শালগেছিয়ায় ওই চিকিৎসকের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে রাত ২টার পর পরিবারের লোকজন দমদমে শালিনীর দেহ নিয়ে যান। তমলুক থানার পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণী চিকিৎসক এমনিতেই অসুস্থ ছিলেন। তারপর হাতে চ্যানেল করা জায়গা থেকে প্রচুর রক্তপাত হওয়ায় রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে দুর্বল হয়ে পড়েন। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। শুক্রবার সকাল ৭টায় শালিনী ভাড়াবাড়ি থেকে মহিষাদলের একটি নার্সিংহোমে যান। সেখান থেকে ফিরে তমলুকের পদুমবসানে একটি নার্সিংহোমে প্র্যাকটিসে যান। শনিবার তমলুক থানার পুলিশ ওই নার্সিংহোমে তদন্তে যায়। সেখানে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার ডিউটিরত অবস্থায় অসুস্থ বোধ করায় হাতে চ্যানেল করে ওষুধ নিয়েছিলেন শালিনী। তারপর বেলা ১১টা ৫৪মিনিট নাগাদ রিসেপশনে নিজের পারিশ্রমিক নিয়ে বেরিয়ে যান। এরপর ওই চিকিৎসক টোটোয় চেপে ভাড়াবাড়িতে যান। তারপর বাথরুমে ঢুকে পোশাক বদলানোর সময়ই হাতের চ্যানেল করা জায়গা থেকে প্রচুর রক্তপাত হয়। প্রথমে একটি নার্সিংহোম, পরে তমলুক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।দমদমের বাসিন্দা নারায়ণ দাস ও কবিতা দাসের একমাত্র সন্তান শালিনী। তিনি কল্যাণী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জেএনএম হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। তারপর আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ থেকে অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগে এমডি করেন। সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসেবে নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ডিউটি করতেন। প্রায় দু’সপ্তাহ আগে তাঁকে ডেপুটেশনে নন্দীগ্রাম থেকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। শালিনীর কিছু অসুখ থাকায় নিয়মিত ওষুধ খেতে হতো। এছাড়া, চার-পাঁচদিন ধরে ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় ভুগছিলেন। তমলুক রেগুলেটেড মার্কেট কমপ্লেক্সের উল্টোদিকে শালগেছিয়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকতেন। মহিষাদল ও তমলুকের একাধিক নার্সিংহোমে তিনি প্র্যাকটিসে যেতেন।
ওই চিকিৎসকের মা ও বাবা আলাদা থাকেন। ২০০০সালে একটি আশ্রমের কাজকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন নারায়ণবাবু। তিনি বর্ধমান শহরে থাকেন। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে তমলুকে আসেন। মেয়ের দেহ নিয়ে দমদমের বাড়িতে ফিরে যান। নারায়ণবাবু বলেন, শালিনী আমাদের একমাত্র সন্তান। কীভাবে মৃত্যু হল বুঝতে পারছি না। এনিয়ে থানায় অভিযোগ করব কি না-এখনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারিনি।