• নবদ্বীপের পাড়ামা ও ওলাদেবীর মন্দিরে হয় প্রাচীন কালীপুজো
    বর্তমান | ১৯ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর জন্মস্থান নবদ্বীপধাম বৈষ্ণবতীর্থ হলেও এখানে শক্তিসাধনার ইতিহাসও প্রাচীন। কোথাও বৈষ্ণবমতে, কোথাও তন্ত্রমতে কালীপুজো হয়। নবদ্বীপের অন্যতম পুরনো কালীমন্দির হল মালঞ্চপাড়ার বুড়োশিবতলা রোডের আচার্যপাড়া লেনের ‘পাড়ামা’ মন্দির ও ওলাদেবীতলার ওলাদেবী মন্দির। এই দুই প্রাচীন কালী মন্দিরই হেরিটেজ তালিকায় রয়েছে।

    পাড়ামা মন্দিরে এখানে পঞ্চমুণ্ডির আসনে অধিষ্ঠিতা ১৩পোয়া দক্ষিণাকালীর মূর্তির পুজো হয়। রক্তজবার মতো লাল ৫৪টি মুণ্ডর মালা দেবীর গলায় থাকে। এখানে সারাবছরই নিত্যপুজো হয়। দীপান্বিতা কালীপুজোর সকালে পুজোর পর পুরনো মূর্তি ভাগীরথীতে বিসর্জন দিয়ে নতুন মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

    কোনও এক কালীসাধক এই পুজো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে সাধক পঞ্চানন চট্টোপাধ্যায় দেবীর পুজোর দায়িত্ব পান। মন্দিরের বর্তমান সেবাইত রাকেশ ঘোষাল বলেন, আমরা পাঁচপুরুষ ধরে এই পুজো করে আসছি। আমি ও আমার ভাই তাপস ঘোষাল নিয়মিত পুজো করি। তন্ত্রমতে নিশিরাতে দেবীর পুজো হয়। কালীপুজোয় খিচুড়ি, অন্ন, শোল, ইলিশ, কাতলা সহ নানারকম মাছ সহ দেবীকে ভোগ দেওয়া হয়। এছাড়া, এই মন্দিরে অন্নকূট হয়। সেদিন দেবীকে অন্ন, কচুর শাক, মোচা, পঞ্চব্যঞ্জন, পুষ্পান্ন, পরমান্নও নানারকম ভাজা নিবেদন করা হয়। এখানে একবেলায় দেবীকে ফলমূল ভোগ দেওয়া হয়। তবে প্রতিদিন দুপুরে তন্ত্রমতে দেবীকে আদা ও কারণ নিবেদন করা হয়। আগে ছাগবলি হলেও এখন দীপান্বিতা পুজোর রাতে কলা, আখ, চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। ওই পরিবারের বধূ সাগরিকা ঘোষাল বলেন, স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে পুজোর সমস্ত আয়োজন করি।

    নবদ্বীপের ওলাদেবীতলায় প্রায় ৩০০বছরের পুরনো কালীপুজো হয়। ওলাদেবী মাতা দক্ষিণাকালীরূপে পূজিতা হন। একসময় ছাগবলি হলেও এখন আর তা হয় না। তবে বলির নৈবেদ্য নিবেদন করা হয়। দীপান্বিতা কালীপুজোয় মাকে ইলিশ মাছ ও পুঁইশাকের চচ্চড়ি নিবেদন করা হয়।

    এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছে গোস্বামী পরিবার। পরিবারের প্রবীণ সদস্য মদনমোহন গোস্বামী বলেন, বৈষ্ণবমতে দক্ষিণাকালীর প্রায় সাত পোয়া মূর্তি তৈরি করে পুজো হয়। সন্ধ্যায় প্রদীপ দেওয়া হলেও রাতে আরতি বা পুজো দেওয়া হয় না। একসময় এই অঞ্চলে ওলাওঠা বা কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। সেই রোগ নির্মূলে স্থানীয়রা এই দেবীর আরাধনা শুরু করেন। সেই থেকে দেবীর নাম হয় ওলাদেবী।সহজানন্দ স্বামী নামে এক কালীসাধক এই দেবীর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে তিনি পণ্ডিত শিবপ্রসাদ গোস্বামীকে পুজোর দায়িত্ব দিয়ে যান। গোস্বামী পরিবারের শরিকরা পালা করে বছরভর নিত্যপুজো করেন। দীপান্বিতা কালীপুজোয় সকালে নিত্যপুজোর পর বারবেলায় পুরনো প্রতিমা ভাগীরথীতে  বিসর্জন দেওয়া হয় । তারপর নতুন প্রতিমা আনা হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)