বাঁকুড়ার নড়রা গ্রামে এখনও বলির আগে দেবীর বিগ্রহ থেকে ফুল পড়ে
বর্তমান | ১৯ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: এই কালীপুজোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘটনার ঘনঘটা। নানা নিয়মের নেপথ্যে রয়েছে কাহিনি। বাঁকুড়া দুই ব্লকের নড়রা গ্রামে মায়ের ভোগে দেওয়া মাগুর মাছের ঝোল খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করেন ভক্তরা। দীর্ঘদিন ধরেই নড়রা নামোবাজারে বড় কালী মন্দিরে এমন রীতি চলে আসছে। পুজোয় এখনও বলিদানের আগে দেবীর বিগ্রহ অথবা ঘট থেকে ফুল পড়ে। এখানে মায়ের অনুমতি নিয়েই শুরু হয় বলি পর্ব।
কথিত আছে, এই নড়রা গ্রামে মায়ের পুজোর আগে বৃষ্টি হতো। সেই বৃষ্টির জল গিয়ে পড়ত মন্দির সংলগ্ন পুকুরে। সেই জলের ধারা বেয়ে পুকুর থেকে উঠে আসত মাগুর মাছ। আর সেই মাছই দেবীর উদ্দেশ্যে বলি দেওয়া হতো। তা দিয়েই রান্না হতো মায়ের ‘গঞ্জভোগ’। সেই ভোগের প্রসাদ ভক্তরা গ্রহণ করতেন। এখনও সেই রীতিই চালু রয়েছে। মাগুর মাছের পাশাপাশি বর্তমানে এই মন্দিরে ছাগ বলিও হয়। যদিও বলিপ্রদত্ত সেই ছাগ কেউ বাড়ি নিয়ে যান না। মন্দির প্রাঙ্গনেই প্রসাদ রান্না হয়। পুজোর পরদিন কয়েক হাজার মানুষ সেই মহাপ্রসাদ গ্রহণ করেন।
একসময় নড়রা গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো হিসাবেই এই কালীপুজো পরিচিত ছিল। বর্তমানে গোটা গ্রামেরই পুজো হয়ে উঠেছে। বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির সদস্যরা ২৫ প্রজন্ম ধরে এই পুজো করে আসছেন। তাঁদের দাবি, পুজো প্রায় ১২০০ বছরের পুরনো। প্রতি প্রজন্মের জন্য দেবীকে একটি করে নৈবেদ্য সাজিয়ে দেওয়া হয়। এটাই নড়রা গ্রামের পুজোর পরম্পরা। প্রজন্ম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নৈবেদ্যর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। মন্দিরের অন্যতম সেবাইত ফাল্গুনি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা জয়রামবাটির বাসিন্দা ছিলেন। কোনও কারণে দেবতা রুষ্ট হওয়ায় একবার নড়রা গ্রামের একটি রঘুনাথের মন্দিরের দরজা খুলছিল না। তখন সেবাইতরা স্বপ্নাদেশ পেয়ে আমাদেরই এক পূর্বপুরুষকে গ্রামে আনেন। তিনিও দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন বলে শোনা যায়। পরে বিশেষ এক তন্ত্রসাধনা করে ওই পূর্বপুরুষ নড়রা গ্রামে কালীপুজো শুরু করেন। তালপাতা, খড়ের চালা হয়ে বর্তমানে পাকা ঠাকুর দালানে দেবী বিশালক্ষীরূপে পূজিতা হন। ফাল্গুনিবাবুর সংযোজন, আগের মতো এখন আর পুকুর থেকে মাগুর মাছ ওঠে না। কিন্তু তা আমাদের কিনতেও হয় না। মা নিজেই তা জোগাড় করে নেন। কেউ না কেউ ঠিক পুজোর আগে মাগুর মাছ নিয়ে মন্দির প্রাঙ্গনে হাজির হয়ে যান। তিনি আরও বলেন, একবার মা কালীর শাঁখা পরতে ইচ্ছা হয়েছিল। তিনি বাঁকুড়া শহরের এক শাঁখারিকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে নিজের পছন্দের শাঁখ থেকে তা বানানোর জন্য বলেছিলেন। মন্দিরে ছাগ ও মাগুর মাছের পাশাপাশি চালকুমড়ো, শশা ও আখ বলি হয়। নিজস্ব চিত্র