বোম্বাট মিলিটারির হাতে পুজো শুরু শান্তিপুরের বামা কালীর
বর্তমান | ১৯ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: সালটা ১৯৪৬। প্রাক স্বাধীনতা পর্বে তখন অস্থির পরিস্থিতি দেশজুড়ে। কোথাও ধর্মীয় কারণে তো কোথাও দেশভাগকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়েছে হিংসা। শ্রীধাম শান্তিপুরও বাদ যায়নি সেই আঁচ থেকে। এই অবস্থায় অশুভের বিনাশ কামনায় শান্তিপুরে শুরু হয়েছিল বামা বা বোম্বাট কালীর আরাধনা। ডাকাতকালীর সেই উগ্র রূপ দেখলে আজও গায়ে কাঁটা দিতে বাধ্য।
বোম্বাট কালীর পুজোর ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে পদে পদে রোমাঞ্চ অনুভব করবেন। বোম্বাট নামে এক মিলিটারি গ্রুপের হাত ধরে নাকি সূচনা হয় এই পুজোর। মূলত সামাজিক অস্থিরতা ঠেকাতেই দেবীর আরাধনা শুরু হয়। পরবর্তীতে দেবীরই কৃপায় স্বাভাবিক হয় শান্তিপুর। বলা হয়, কালীক্ষেত্র শান্তিপুরের প্রথম ডাকাতে কালী এটাই। যেহেতু বোম্বাট গ্রুপ আরাধনা শুরু করে তাই কালক্রমে পুজোর নামও হয়ে যায় বোম্বাট কালী। এছাড়া এই কালী বামা কালী নামেও খ্যাত। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে আজ যে বামাকালী বিখ্যাত, এই পুজো সেটি নয়। বরং তার অভিভাবক। পরবর্তীকালে এই বোম্বাট কালীর রূপ অনুকরণেই এক স্বপ্নাদেশের মাধ্যমে আধুনিক বামা কালীর পুজো শুরু হয়। তান্ত্রিক মতে হয় বোম্বাট মায়ের পুজো। কথিত আছে, এই কালীর অনুকরণেই পরবর্তীতে শান্তিপুরের অন্যান্য ডাকাত কালীর পুজোর সূচনা। শান্তিপুরের লাইব্রেরি পাড়ায় এই পুজো হয়। প্রায় ১৫ ফুটের প্রতিমা। এই বোম্বাট কালীর পুজোর হাত ধরেই শান্তিপুরে শুরু হয় মশালের প্রথা। মশাল নিয়ে প্রদর্শনী এই পুজোর আকর্ষণ।
চমকের এখানেই শেষ নয়। এখনও আসল পঞ্চমুণ্ডির আসনেই হয় বোম্বাট কালীর পুজো। যেখানে রয়েছে আসল নরমুণ্ডের মালা। অমাবস্যার রাতে যা গায়ে শিহরণ খেলিয়ে দেবে। কালীপুজো তো বটেই, প্রতি অমাবস্যার রাতেই এখানে পঞ্চমুণ্ডির আসনে পুজো হয়। বোম্বাট কালীমাতা পূজা পরিষদের প্রশাসকমণ্ডলীর সম্পাদক পলসন ঘোষ বলেন, এই পুজো অতি জাগ্রত। পুজো তান্ত্রিক মতে গভীর রাতে হয়। একসময় বলির প্রচলন ছিল। নিশিরাতে মশাল জ্বালিয়ে পুজো হয়। কোনও পাড়া কিংবা মহল্লার পুজো নয় এটা। আমরা পুজোর রীতিনীতি অপরিবর্তিত রাখার চেষ্টা করে চলেছি। আমাদের মশাল প্রদর্শন ও আসল নরমুণ্ডের মালা দেখতে বহু মানুষ প্রতি বছর ভিড় করেন শান্তিপুরে। নিজস্ব চিত্র