ধান বিক্রির নয়া নির্দেশিকায় আতান্তরে চাষিরা, উদ্বৃত্ত ঘুরপথে ফড়েদেরই হাতে
বর্তমান | ১৯ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: রাজ্য সরকার ২৫-২৬ অর্থবর্ষে ধান বিক্রির ক্ষেত্রে নয়া নির্দেশিকা জারি করেছে। একজন চাষি একদফায় ১৫ কুইন্টাল ধান বেচতে পারবেন। গত বছর যা ৩০ কুইন্টাল ছিল। সর্বোচ্চ ধান বিক্রির পরিমাণ ৯০ কুইন্টাল রাখা হয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলার প্রান্তিক চাষিরা রাজ্যের নতুন এই নির্দেশিকায় বিপদে পড়েছেন। দেখা যাচ্ছে একজন কৃষকের বাড়তি ধান ঘুরপথে সেই ফড়েদের হাতেই চলে যাচ্ছে।
পরিবারের সদস্যদের ভিন্ন ভিন্ন জমি। কিন্তু কৃষক ক্রেডিট কার্ড মাত্র একটি। সার্বিকভাবে ১৫ কুইন্টালের বেশি ধান উৎপাদিত হলেও তা বিক্রি করা যাচ্ছে না। অনেক পরিবারেই নেই জমির কাগজপত্র। খোলা বাজারে ধান কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
ঝাড়গ্রাম জেলা খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ দপ্তরের আধিকারিক সুজয় দাস বলেন, একদফায় ১৫ কুইন্টাল ধান বিক্রি নিয়ে জেলার প্রান্তিক চাষিরা সমস্যায় পড়ছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ঝাড়গ্ৰাম প্রান্তিক জেলা। ছোট, ছোট জমিতে এখানে ধান চাষ হয়। পরিবারের একাধিক ছেলেদের নামে জমি ভিন্ন। কিন্ত কৃষক বিমার কার্ড ভিন্ন। বিমার একটা কার্ড দেখিয়ে কিষাণ মান্ডিতে ধান বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছিল। কিন্তু নতুন নিয়মে জেলার বহু কৃষক ফাঁপড়ে পড়ছেন। জেলার প্রান্তিক এলাকার আদিবাসী ও জনজাতি পরিবারের সদস্যদের অনেকের জমির কাগজ নেই। কিষান মান্ডিতে ধান বিক্রির ক্ষেত্রে তাঁরাও সমস্যায় পড়ছেন। রাজ্য সরকার ফড়েদের আটকাতে এই নয়া নির্দেশিকা চালু করেছে। কিন্তু এতে যেসব কৃষক বাড়তি ধান বেচতে পারছেন না, তাদের অনেক কম দামে খোলা বাজারে কখনও আবার ফড়েদের কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। জেলা খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়ার ছানাপাড়া গ্ৰামের কৃষক আদিত্য রায় বলেন, আমরা তিন ভাই। ভাইয়ের নামে কৃষক বিমার কার্ড রয়েছে। একই কার্ডে কিষান মান্ডিতে ২,২২০ টাকায় ধান বিক্রি করেছি। রাজ্য সরকারের নয়া নির্দেশিকায় এবার কিষান মান্ডিতে ধান বিক্রি করতে পারিনি। খোলা বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। যারা ধান বিক্রি করতে পারছে না, ফড়েরা তাঁদের থেকে কম দামে ধান কিনছেন।
আরেক কৃষক বিদ্যুৎ মাহাত বলেন, গ্ৰামীণ এসব এলাকায় পরিবারের সদস্যরা আলাদা হয়ে গিয়েছে। কিন্ত জমি বাবার নামে আছে। কৃষক ক্রেডিট কার্ডও একটি। নতুন নিয়মের জেরে আমরা সমস্যায় পড়ছি। সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে পাঁচশো থেকে ছ’শো টাকা কমে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।
গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের এক চাষি বলেন, যাঁরা প্রকৃত চাষি তাঁদের দু’টি কিষাণ ক্রেডিট কার্ড থাকা স্বত্বেও সমস্যায় পড়ছেন। তিরিশ কুইন্টালের বেশি ধান বিক্রি করা যাচ্ছে না। বাড়তি ধান খোলা বাজারে বেচতে হচ্ছে। আবার যাঁরা প্রকৃত চাষি নন, সামান্য জমি দেখিয়ে কার্ড করে নিয়েছেন, ফড়েরা তাঁদের কার্ড ব্যবহার করে কম দামে কেনা ধান কিষান মান্ডিতে বেচে দিচ্ছে। যে কৃষকের যত জমি, তার উপর ভিত্তি করে ধান বিক্রির নিয়ম দরকার। না হলে প্রকৃত যারা চাষি নন তাঁরা ও ধূর্ত ফড়েরা নতুন নিয়মের সুযোগ নেবে।