গোর্খাল্যান্ড সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যের মতামত না নিয়েই একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘সহযোগী চেতনার পরিপন্থী’ বলে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন তিনি। শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লেখা এক চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, গোর্খা সম্প্রদায় ও পাহাড়ের শান্তি রক্ষার মতো সংবেদনশীল বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ না করে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ‘সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর’ পরিপন্থী।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর বিষয়টি সরাসরি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশাসনিক ও শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। তাই কেন্দ্রীয় সরকার একতরফাভাবে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করতে পারে না। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি বিস্মিত ও হতবাক হয়েছি জেনে যে, কেন্দ্র সরকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার পঙ্কজ কুমার সিংহকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ করেছে। এই সিদ্ধান্ত একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০১১ সালের ১৮ জুলাই দার্জিলিংয়ে কেন্দ্র, রাজ্য সরকার এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যে যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তার ভিত্তিতেই জিটিএ গঠিত হয়। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ওই সময়ের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ে প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা, শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
তিনি লিখেছেন, ‘গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পাহাড়ে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। আমাদের সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা সেই শান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের একতরফা সিদ্ধান্ত পাহাড়ের সামাজিক ঐক্য ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে।’
মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন, কেন্দ্র যেন এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে। তাঁর মতে, গোর্খা সম্প্রদায় বা জিটিএ সংক্রান্ত কোনও উদ্যোগ নেওয়ার আগে রাজ্য সরকারের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ পরামর্শ করা প্রয়োজন। তিনি লিখেছেন, ‘এই সংবেদনশীল বিষয়ে কেন্দ্রের একতরফা পদক্ষেপ রাজ্যের স্বার্থবিরোধী এবং পাহাড়ের শান্তি ও সম্প্রীতিকে বিঘ্নিত করতে পারে।’
চিঠির শেষে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর চেতনা ও কেন্দ্র-রাজ্যের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখার স্বার্থে কেন্দ্রের এই নিয়োগপত্র প্রত্যাহার করা হোক।’ এদিন এই চিঠিতে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদের পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে দীপাবলির শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন।