শাহের আশ্বাস সার, কাল শেষবার মুহরত ট্রেডিং! বন্ধ হচ্ছে ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জ
বর্তমান | ১৯ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ইতিহাসে ঠাঁই পেতে চলেছে দেশের শতাব্দী প্রাচীন শেয়ার বাজার ‘ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জ’। ইতিমধ্যে এই শেয়ার বাজার গুটিয়ে ফেলার জন্য উদ্যোগ শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই কাল, সোমবার ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জে শেষবারের মতো মুহরত উৎসব হতে চলেছে। লগ্নিকারীরা তো বটেই, ভারত তথা এশিয়ার দ্বিতীয় প্রাচীন শেয়ার বাজারের অস্তিত্ব বিলীন হতে চলায় মন খারাপ সাধারণ মানুষেরও।
হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী দেওয়ালির দিন নতুন বছর শুরু হয়, যার নাম ‘সম্বৎ’। সেই দিনই ব্যবসার খাতা খোলার রেওয়াজ আছে ব্যবসায়ীমহলে। ওই দিন নির্ঘণ্ট অনুযায়ী বিশেষ সময়ে বিশেষ লেনদেন হয় ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে। তাকেই মুহরত বলা হয়। তার আগে দেওয়ালির পুজো হয়। তারই প্রসাদ হিসেবে কয়েক লক্ষ লাড্ডু বিলি হয় এই দুই এক্সচেঞ্জে। এই মুহরত চালু আছে ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জেও।
এই শেয়ার বাজারের প্রশাসনিক কর্তা শঙ্করলাল সিং বলেন, ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া বা সেবির কাছে তাদেরই নির্দেশে এগজিট বা কাজ গোটানোর আবেদন করা হয়েছে এই শেয়ার বাজারের তরফে। এরপর সেবির নিয়ম অনুযায়ী নতুন রূপে বড় আকারের ব্রোকিং সংস্থা হিসেবে উঠে আসার কথা এই প্রতিষ্ঠানের। এই শেয়ার বাজারের ব্রোকাররা এনএসই এবং বিএসই-তে ট্রেডিং করতে পারবেন। কিন্তু শেয়ার বাজার হিসেবে এতদিন যে প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব ছিল, তা শেষ হওয়ার মুখে। তাই এবারই আমরা শেষবারের মতো মহরত উদযাপন করব।’
আইনগতভাবে ১৯০৮ সালে জন্ম হয় ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের জন্ম ১৮৭৫ সালে। তবে নথি বলছে, অসংগঠিতভাবে ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন শুরু হয়েছিল ১৮৬৩ সালে। নিয়মভঙ্গের অভিযোগে এই শেয়ার বাজারের কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেয় সেবি। তা নিয়ে বিবাদ গড়ায় আদালত পর্যন্ত। শেষ বাদল অধিবেশনে সংসদে অর্থমন্ত্রক জানিয়েছে, নিজেদের কাজ গুটিয়ে ফেলার জন্য সেবির কাছে আবেদন করেছে এই শেয়ার বাজার।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, এই এক্সচেঞ্জ বাঁচাতে চেষ্টার ত্রুটি রাখা হয়নি। এমনকি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ২০২১ সালে ঘোষণা করেছিলেন, ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চলবে। তথ্যপ্রযুক্তি পার্কগুলির সঙ্গে এই শেয়ার বাজারকে বাঁচাতে খরচ হবে ৩০০ কোটি টাকা। কিন্তু সেসব এখনও শুধুই প্রতিশ্রুতি হিসেবে রয়ে গিয়েছে। বাংলা তথা শহরের বুক থেকে বিদায় নিতে চলেছে এই ঐতিহ্যবাহী শেয়ার বাজার। তাই এবারই শেষ মুহরত উদযাপন!