• সিঙাড়ার টাকা দেওয়ার আগেই ছেড়ে দিল ট্রেন, যাত্রীকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে বেমক্কা মার রেল হকারের...
    আজকাল | ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: যাত্রী সুরক্ষা এবং রেল প্ল্যাটফর্মে বিক্রেতাদের দৌরাত্ম্য নিয়ে ফের বড়সড় প্রশ্ন। মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর রেল স্টেশনের এক চাঞ্চল্যকর ঘটনাকে ঘিরে তোলপাড় নেটমাধ্যম। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, এক সিঙাড়া বিক্রেতা এক যাত্রীর কলার ধরে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ, মাত্র ২০ টাকার খাবারের বদলে ওই যাত্রীর প্রায় দু'হাজার টাকা মূল্যের স্মার্টওয়াচটি কেড়ে নেন তিনি।

    ঘটনাটি গত ১৭ অক্টোবর জব্বলপুর স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের। জানা গিয়েছে, এক তরুণ যাত্রী ওই বিক্রেতার কাছ থেকে সিঙাড়া কেনার পর অনলাইনে দাম মেটাতে যান। কিন্তু নেটওয়ার্কের সমস্যা থাকায় সেই পেমেন্ট সফল হয়নি। ইতিমধ্যে ট্রেন চলতে শুরু করলে, যাত্রী বিক্রেতাকে জানান যে তিনি পরে টাকা পাঠিয়ে দেবেন। এমনকী বিক্রেতার কিউআর কোডের একটি ছবিও তুলে নেন তিনি।

    অভিযোগ, এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওই বিক্রেতা। তিনি ওই যাত্রীর কলার ধরে ফেলেন এবং তাঁকে চলন্ত ট্রেনে উঠতে বাধা দেন। ওই যুবক বার বার অনুনয়-বিনয় করা সত্ত্বেও এবং নতুন করে অনলাইন পেমেন্ট করার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। অভিযোগ, স্মার্টওয়াচটি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ওই যাত্রীকে ছাড়েননি বিক্রেতা। শেষ পর্যন্ত ঘড়িটি খুইয়েই রেহাই পান ওই যাত্রী।

    প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এই ঘটনায় প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত অন্য যাত্রীরা হতবাক হয়ে যান। তাঁদের মধ্যে অনেকেই মোবাইল ফোনে গোটা পর্বটি রেকর্ড করলেও বিক্রেতাকে বাধা দিতে এগিয়ে আসেননি।

    ভিডিওটি ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসে রেল কর্তৃপক্ষ। জব্বলপুরের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) অবিলম্বে পদক্ষেপ করেছেন। ঘটনার জেরে অভিযুক্ত বিক্রেতার লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। রেল সুরক্ষা বাহিনী (আরপিএফ) একটি মামলা দায়ের করে ওই বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করেছে।

    এই ঘটনার আবহে ভারতীয় রেলে যাত্রী পরিষেবার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এ ক'বছরে (২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫) রেলের কাছে ৬১ লক্ষেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে খবর। মধ্যপ্রদেশের নীমচের বাসিন্দা চন্দ্র শেখর গৌড়ের একটি আরটিআই আবেদনের জবাবে রেল বোর্ডের প্রকাশ করা তথ্যে যাত্রী পরিষেবার এক উদ্বেগজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। অভিযোগের তালিকায় সবচেয়ে উপরে রয়েছে নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা এবং বৈদ্যুতিক গোলযোগের মতো বিষয়।

    শুধুমাত্র ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ৩২.০৮ লক্ষ অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে, যা ২০২৩-২৪ সালের ২৮.৯৬ লক্ষ অভিযোগের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। ট্রেন পরিষেবা সংক্রান্ত অভিযোগ ১৮ শতাংশ বাড়লেও, স্টেশন সম্পর্কিত অভিযোগ ২১ শতাংশ কমেছে।

    তথ্য বলছে, যাত্রীদের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নিরাপত্তা। ট্রেনের ভিতরে নিরাপত্তা সংক্রান্ত অভিযোগ ২০২৩-২৪ সালের ৪.৫৭ লক্ষ থেকে একলাফে ৬৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪-২৫ সালে ৭.৫০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। এই দুই বছরে শুধু নিরাপত্তার বিষয়েই ১২.০৭ লক্ষ অভিযোগ জমা পড়েছে। অর্থাৎ, ট্রেন সংক্রান্ত প্রতি চারটি অভিযোগের মধ্যে একটিই হল নিরাপত্তা বিষয়ক।
  • Link to this news (আজকাল)