আলোর উৎসবের আগেই অন্ধকার, ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে মৃত মুর্শিদাবাদের তিন পরিযায়ী শ্রমিক ...
আজকাল | ২০ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে সম্প্রতি অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বহরমপুর এবং হরিহরপাড়া থানা এলাকার ৭ পরিযায়ী শ্রমিকের।
সেই ঘটনার রেশ মেলানোর আগেই ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে তিনটি পৃথক ঘটনায় শনিবার মৃত্যু হল মুর্শিদাবাদ জেলার তিন পরিযায়ী শ্রমিকের । মৃত পরিযায়ী শ্রমিকেরা বেঙ্গালুরু এবং মহারাষ্ট্রের তিনটি নির্মাণ পৃথক নির্মাণস্থলে কর্মরত ছিলেন। পরিবারের আর্থিক হাল ফেরানোর জন্য গ্রামের আরও কয়েকজন যুবকের সঙ্গে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করার জন্য তারা ভিন রাজ্যে গিয়েছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
ডোমকল থানার সারাংপুর গ্রামের বাসিন্দা রাকিবুল শেখ (৩৭) নামে এক যুবক গ্রামেরই আরও কয়েকজনের সঙ্গে গত কয়েক মাস আগে কেরালার একটি নির্মাণস্থলে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যান। দিন সাতেক আগে ওই নির্মাণস্থলে কাজ করার সময় হঠাৎই উপর থেকে পড়ে গিয়ে মাথা এবং শরীরের অন্যান্য অংশের গুরুতর চোট পান রাকিবুল। সূত্রের খবর,ঘটনার দিন রাকিবুল আরও কয়েকজনের সঙ্গে বাঁশ এবং লোহার 'ভারা' বেঁধে নির্মাণ কাজ করছিলেন। কিন্তু সেখানে যথাযথ সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় পা পিছলে সে উপর থেকে নিচে পড়ে যায়।
গুরুতর আহত অবস্থায় রাকিবুলকে তার সহকর্মীরাই স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করায়। প্রায় সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর শনিবার রাতে তার মৃত্যু হয়। রাকিবুলের মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা এলাকায় জুড়ে।
অন্যদিকে অপর একটি ঘটনায় বেঙ্গালুরুর একটি নির্মাণস্থলে ডোমকলে সারাংপুর গ্রামেরই অপর এক নির্মাণ শ্রমিক হোসেন শেখকে (২০) শনিবার ঝুলন্ত অবস্থায় খুঁজে পান ওই নির্মাণস্থলের অপর কিছু শ্রমিক। দ্রুত তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা হোসেনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ব্যাঙ্গালুরুতে কাজ করতে গিয়ে কী কারণে হোসেন আত্মঘাতী হলেন তা ভাবিয়ে তুলেছে তার পরিবারকে। অন্যদিকে অপর একটি ঘটনায় মহারাষ্ট্রের নাসিকে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হল রানীতলা থানার বাসিন্দা মহম্মদ রেজওয়ান (৪২) নামে এক পরিযায়ী শ্রমিকের। সূত্রের খবর , প্রায় দেড় মাস আগে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করার জন্য নাসিকে গিয়েছিলেন রেজওয়ান। সেখানে প্রখর রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে কাজ করতে গিয়ে গত কয়েকদিন ধরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ওই ব্যক্তি। রেজওয়ানের সঙ্গে থাকা অন্য পরিযায়ী শ্রমিকেরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করালে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
দীপাবলীর ঠিক আগে তিন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন গ্রামে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের তরফ থেকে মৃত তিন পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ গ্রামের বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বেঙ্গালুরুতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত সাত পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারকে ইতিমধ্যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ছাড়াও বিশেষ হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই একাধিক পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারের তরফে ওই চাকরির জন্য জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন।