• আরাধনা করতেন বণিকরা, রায়গঞ্জের ‘ঘাটকালী’ পুজোর বয়স ৫০০ বছর
    প্রতিদিন | ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: ব্রিটিশকে বিদায় করতে নৌকায় ভেসে এখানে গোপনে আস্তানা গেড়েছিলেন তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার সন্ন্যাসীরা। বণিকরা নৌকা থেকে নেমে স্রোতস্বিনী কুলিক নদীর পাড়ে ঘাটকালীর পুজো করে এখানকার মাটির বেদিকে মহামায়া কালীরূপে আরাধনা করতেন। তারপর সওদা শুরু হতো। প্রায় পাঁচশো বছর উত্তীর্ণ রায়গঞ্জের আদি বন্দরের ‘শ্রীশ্রী করুণাময়ী কালীমাতা’র পুজোর সূচনা করেছিলেন এক নাগা সন্ন্যাসী। সেই পুজো চলছে আজও। এবছরও নির্ধারিত তিথি-ক্ষণ মেনে পূজিত হবেন ‘ঘাটকালী’।

    নাগা সন্ন্যাসীর হাতে এই পুজোর প্রচলন ঘটলেও জমিদার রুঘুনন্দ গিরি গোঁসাইয়ের তত্ত্বাবধানে বন্দরে কালীমন্দির তৈরি হয়। তারাপীঠের তন্ত্রসাধক জানকীনাথ চট্টোপাধ্যায় এখানকার প্রথম পুরোহিত ছিলেন। পরবর্তীতে যোগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং বংশপরম্পরায় নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। ইংরেজ শাসন অবসানের পর মদনমোহন চট্টোপাধ্যায় থেকে তাঁর পুত্র পিন্টুবাবু। তাঁর ভাই মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় দীর্ঘদিন মন্দিরের পুজো করতেন। কিন্তু এখন তিন পুরুষ প্রয়াত। স্বামী ও দুই পুত্র হারিয়ে শোকার্ত চিত্রা চট্টোপাধ্যায় মন্দির প্রাঙ্গনের আবাসন ছেড়ে আপাতত বীরভূমের পৈতৃক ভিটায় ফিরে গিয়েছেন। ফলে প্রাচীন কালীমন্দিরটি এখন কার্যত অভিভাবকহীন।

    এই আবহে এই প্রথম স্থানীয় কয়েকজন যুবক আদি কালীবাড়ির পুজোর আয়োজনের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ঐতিহ্য মেনে তান্ত্রিক মতে কালীপুজোয় ছাগ বলি এবার হবে না। গিরি গোঁসাইয়ের ষষ্ঠ উত্তরাধিকার কমলেশ গোস্বামী বলেন, “এই বন্দর দেবদেবীর পীঠস্থান। কালীর পাঁচবোনের মধ্যে ঘাটকালী, বুড়িকালী আর আদি করুণাময়ী কালীর পুজো এই বন্দরেই হয়। তাছাড়া শিবমন্দির রামসীতা মন্দির এখানে রয়েছে।

    আসলে আজকের রায়গঞ্জের বিস্তীর্ণ জনপদের উৎসভূমি বন্দরের আদি কালীমন্দির। তবে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের বংশধরদের শেষ পুরোহিতের মৃত্যুতে ইতিহাস মিশে থাকা এই প্রাচীন দেবালয় চত্বর কার্যত প্রায় নিস্তব্ধ, নিস্তরঙ্গ নদীর মতো। বর্তমানে পুজো আয়োজনের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় বাসিন্দা অপূর্ব দাস, উত্তম সাহা, মনোজ সাহা এবং রুপেশ সাহাদের কথায়, “এত বছরের পুরনো মন্দির। রায়গঞ্জ-সহ গোটা উত্তরবঙ্গের ভক্তদের আবেগ মিশে আছে প্রাণের কালীমন্দিরে। তবে এত বছরেও কোন ট্রাস্টি হয়নি। ফলে চট্টোপাধ্যায় পরিবার সূচনা থেকে পুজোর দায়িত্বে থাকলেও এখন পরিবার ছেড়ে বারোয়ারির চেহারা নিয়েছে এই পুজো। মন্দিরে মা কালীর সোনার গয়না ক্যাম্পাসে আর নেই। তবে এবারও ঐতিহ্য মেনে পুজোর দিন বীরভূম থেকে পুরোহিত আসবেন।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)