দক্ষিণেশ্বরের আদলে তৈরি হুগলির এই মন্দির, বিরাজ করেন মা আনন্দময়ী
প্রতিদিন | ২০ অক্টোবর ২০২৫
সুমন করাতি, হুগলি: বাংলাজুড়ে কালীক্ষেত্রের অভাব নেই! কোথাও রয়েছেন বড় মা, আবার কোথাও রয়েছেন ভবতারিণী। তাঁদের কৃপা এবং মহিমাও অপার। তেমনই গঙ্গার অন্য পাড়ে রয়েছেন জগৎনগরে মা আনন্দময়ী। একেবারে দক্ষিণেশ্বরের আদলেই তৈরি মন্দিরেই এই মায়ের অধিষ্ঠান। হঠাৎ করে দেখলে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির ভেবেও ভুল করতে পারেন। কিন্তু ঠিক কোথায় এই মন্দির?
হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইন শাখায় মির্জাপুর-বাঁকিপুর স্টেশনে নেমে দশ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ ধরে আসলেই হুগলির জগৎনগর গ্রাম। সেখানেই রয়েছে মা আনন্দময়ীর এই কালীমন্দির। রীতি মেনে সারা বছর ধরেই চলে এই মায়ের পুজো। তবে কালীপুজোয় গোটা রাত জুড়ে চলে মায়ের আরাধনা। ঢল নামে ভক্তদের।
জগৎনগরে মা আনন্দময়ীর মন্দির তৈরির পিছনে আছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। কিংবদন্তি অনুসারে, এক তান্ত্রিক সাধক মা আনন্দময়ীকে স্বপ্নাদেশে পান। প্রায় ৩৫০ বছর আগের ঘটনা। আর সেই স্বপ্নাদেশ পেয়েই প্রতিষ্ঠা করেন মন্দির। কিন্তু মন্দিরের ব্যয়বহন আদৌ সহজ ছিল না। এগিয়ে এসেছিলেন ভক্তরা। তাঁদের দেওয়া দানের টাকাতেই একেবারে দক্ষিণেশ্বরের আদলে এই মন্দির তৈরি হয়। মন্দির কমিটির সম্পাদক শ্রীপতি আদক জানান, ”মন্দিরের পাশেই ছিল কানা নদী। একেবারে জঙ্গলে ঘেরা গ্রাম। এলাকার মানুষজন জঙ্গলে ঘেরা এলাকায় থাকা শ্মশানে শবদেহ নিয়ে আসতেন সৎকার করতে।”
তাঁর কথায়, ”গ্রামের বাসিন্দা সুবলচন্দ্র রায়ের আনন্দময়ী ওরফে ‘আন্দি’ নামে নয় বছর বয়সি এক ব্রাহ্মণকন্যার মৃত্যু হয়। শ্মশানে মৃতদেহ সৎকার করার সময় হঠাৎ তুমুল ঝড় বৃষ্টি শুরু হতেই শবযাত্রীরা জ্বলন্ত মৃতদেহ ফেলে পালিয়ে যায়। সেই সময় ওই তান্ত্রিক ওই জঙ্গলের পাশেই একটি স্থানে ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। সেই সময় তিনি স্বপ্নাদেশ পান আধপোড়া মৃতদেহ কবর দিয়ে তার উপরই প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করতে। সেই থেকে এই মন্দিরে কবরের উপর পঞ্চমুণ্ডির আসনে অধিষ্ঠাত্রী রয়েছেন মা আনন্দময়ী।”
শ্রীপতি আদক বলেন, প্রথমে জঙ্গলের ডালপালা এবং গাছপাতা দিয়ে ঘর তৈরি করেন, সেখানেই মায়ের ঘট স্থাপন করে শুরু করে পুজো শুরু করেন। কিন্তু পরে ওই গ্রামের এক ব্যবসায়ী কৈলাস দত্তকে মাকে স্বপ্নাদেশ দেন। এরপর বাংলার ১২৯৪ সালে একটা ছোট মন্দির প্রতিষ্ঠা করে বেনারস থেকে অষ্টধাতুর মূর্তি এনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।” মন্দির তৈরির জন্য জমি দান করেন তৎকালীন চন্দননগরের জমিদার সরকাররা। উত্তরপ্রদেশের কাশী থেকে আনা হয় পুরোহিত। শুরু হয় পূজা। এরপর ধীরে ধীরে ভক্তদের দেওয়া টাকায় তৈরি হয় দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে তৈরি মন্দির। এই মন্দিরে রয়েছে ৯টা চূড়া।
মন্দিরের সেবায়েতের সুখদেব চক্রবর্তী বলেন, ”প্রাচীন রীতি মেনে মন্দিরের গর্ভগৃহে তাঁদের বংশধররা ছাড়া অপর কেউ প্রবেশ করতে পারে না। কালীপুজোর দিনে চারপ্রহরের পুজো হয়। লুচি, খিচুড়ি, পায়েস ছাড়াও ফল দিয়ে মায়ের ভোগের নৈবিদ্য দেওয়া হয়। প্রথা মেনে আগে ছাগবলি হত। কিন্তু বর্তমানে বলি বন্ধ রয়েছে। তবে পুজোর দিন ফল বলি দেওয়া হয়।” সেবায়েতের কথায়, জগৎনগরের মা আনন্দময়ী খুবই জাগ্রত। ভক্তদের সকল মনস্কামনা পূরণ করেন। আর তাই মায়ের কাছে সারা বছরেই ভিড় থাকে।