• ভূত সন্ধানীদের ক্যামেরায় রহস্য কান্না, 5G যুগেও হেস্টিং হাউসে নিশীথিনী বিলাপ!
    প্রতিদিন | ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • অভিরূপ দাস: কালীপুজোর আগের দিন ভূত চর্তুদশী। যে নিশীথে অলিগলিতে নেমে আসে কবন্ধ। আসর জমায় অশরীরিরা। আলিপুরের হেস্টিংস হাউসে কি তেমনই কেউ রয়েছেন? সম্প্রতি শহরের ঘোস্ট ট‌্যুরিজমের একটি ভৌতিক সফর এই প্রশ্ন তুলে দিল। যুক্তিবাদীরা যতই রে রে করে উঠুক, ভূত সন্ধানীরা বলছেন, ‘‘বিশ্বাসে মেলায় বস্তু।’’

    শহরে ঘোস্ট ট‌্যুরিজমের রমরমা। তেমনই একটি সংস্থা ট্রিপশিপট্রাইব শনিবার ভূত চর্তুদশীর আগের রাতে আয়োজন করেছিল ভূত অন্বেষণের। তালিকায় ছিল আলিপুর হেস্টিংস হাউস, পার্কস্ট্রিট মল্লিকবাজার কবরখানা, নিমতলা ঘাট, ১ নম্বর গার্স্টিন প্লেস। ২০ জনকে নিয়ে ঘন্টা পাঁচেকের ছিমছাম ভূতুড়ে সফর। ছুঁয়ে দেখা অতীতকে। এই ট‌্যুরে ইতিহাসের সূত্রধর আরজে সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়।

    চলছিল ঠিকঠাক। গোল বাঁধল হেস্টিংস হাউসে এসে। ঘড়িতে তখন রাত একটা। জনা কয়েক উর্দিধারী দাঁড়িয়ে সেখানে। শহর কলকাতা গভীর ঘুমে। আওয়াজ বলতে রাতের নিস্তব্ধতা চিরে ছুটে চলা দু’একটা গাড়ি। ভূত সফরের সদস‌্য সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘উর্দিধারীরা অনুমতি দিল কিছুটা যেতে পারেন। তবে ভেতরে যাবেন না।’’ হেস্টিংস হাউসের সামনে পৌঁছতেই সবারই কেমন একটা অস্বস্তি।

    হঠাৎই একটা কান্নার আওয়াজ! যেন বুক চাপড়ে বিলাপ করছে কেউ। একটু থেমে। আবার। ক্রমশ স্পষ্ট হল সেই বিলাপের আওয়াজ। দু’একজন মোবাইলে রেকর্ড করলেন। বাকিরা বললেন, ‘‘আর নয়। এবার চলো এখান থেকে।’’ সে রেকর্ড সামনে আসতেই হইচই। আলিপুরের হেস্টিংস হাউস শহর কলকাতার কুখ‌্যাত ভূতুড়ে বাড়ির মধ্যে একটা। গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস থাকতেন এককালে। আজ তা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জনশ্রুতি, এখানে স্বয়ং হেস্টিংসেরই পদধ্বনি শোনা যায়। আলিপুরের পুরনো বাসিন্দারা বলেন, হেস্টিংস নিজেই কিছু কাগজপত্রের সন্ধানে বারবার এখানে ফিরে আসেন। এ বাড়ি নিয়ে আরও একটি গল্প ঘোরে লোকমুখে। প্রায় এক শতাব্দী আগে নাকি এখানে ফুটবল খেলতে গিয়ে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। সেও মায়া কাটাতে পারেনি এ জায়গার।

    ঘোস্ট ট‌্যুরিজমে সত্যি ভূত?
    ‘ট্রিপশিপট্রাইবের’ মার্কেটিং এর দায়িত্বপ্রাপ্ত পরমা দাশগুপ্তর কথায়, ‘‘শহরের ভুতুড়ে তকমা পাওয়া জায়গাগুলো দেখাই। মানুষকে সেই জায়গার ইতিহাস বলি। কিন্তু শনিবার রাতে অদ্ভুত ওই কান্নার আওয়াজটা অপ্রত‌্যাশিত। অনেকেই বলছেন এটা কুকুরের কান্নার আওয়াজ। কিন্তু সেটাই যদি সত্যি হয়, কুকুরের এমন বিলাপ আমরা সত্যিই কখনও শুনিনি।’’সমাজ মাধ‌্যমে সেই বিলাপের ভিডিও শেয়ার করেছেন সংবাদ সঞ্চালিকা মৈত্রেয়ী মিত্র। তাঁর স্বামী সুমন্ত ছিলেন ওই ভূতান্বেষীর দলে। মৈত্রেয়ীর কথায়, ‘‘সব কিছু উড়িয়ে দেওয়া যায় কিনা জানি না। ওখানে ওই আওয়াজ যাচাই করে দেখার সুযোগ আর সাহস কোনওটাই ছিল না।’’ 

    ভূত আছে না নেই? তা নিয়ে যুক্তিবাদীদের সঙ্গে বিশ্বাসীদের তর্ক অবিরাম। তবে ভূত দেখার ইচ্ছে সকলেরই ষোলোআনা। তার প্রমাণ তো পাওয়াই যাচ্ছে! পরমার কথায়, ‘‘ভূত দেখতে নিয়ে যাবো! এই ফাইভ জি-র যুগেও এমন পোস্ট ফেসবুকে দিতে না দিতেই হাজারও আবেদন। সকলেই চান একবার অশরীরির ছোঁয়া।’’ আর অশরীরিরা? বিশ্বাসীদের কথায়, ‘‘কপাল থাকলে হেস্টিংস হাউসের কান্না শুনতে পাবেন।’’
  • Link to this news (প্রতিদিন)