পাটনা: পরনে কালো পোশাক, মুখে কালো মাস্ক। মার্জিত কথাবার্তায় উচ্চশিক্ষার ছাপ স্পষ্ট। বিহারের ‘মেঠো’ রাজনীতিতে এখন চর্চা এই যুবতীকে নিয়েই। নাম পুষ্পম প্রিয়া চৌধুরী। ২০১৯ সালে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে স্নাতকোত্তর পাশ করেছিলেন দ্বারভাঙার তরুণী। তারপরই চমক। বিদেশে লোভনীয় চাকরির বদলে বাড়ি ফিরে আসেন। ২০২০ সালে তৈরি করেন নিজের দল ‘দ্য প্লুরালস পার্টি’। সেই বছর বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ১৪৮টি আসনে লড়াই করেছিল পুষ্পমের দল। এবার ২৪৩টি আসনেই প্রাথী দিয়েছে তারা। পুষ্পম নিজেই দলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী। জাতপাত বা ধর্মের নামে রাজনীতি নয়, উন্নয়নকে হাতিয়ার করেই বিহারে ‘পরিবর্তন’ আনতে চাইছেন পুষ্পম। দ্বারভাঙা আসনে মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছেন। প্রচারের সময় সাদা পোশাক ছাড়া নেতা-নেত্রীদের খুব একটা দেখা যায় না। তাছাড়া ব্যানার-পোস্টারে প্রার্থীদের ছবি থাকাটাই দস্তুর। সেখানেও যেন বদল আনতে চেয়েছেন পুষ্পম। কালো ছাড়া অন্য রঙের পোশাক পরেন না তিনি। মাস্কের আড়ালে তাঁর মুখও দেখা যায় না। তরুণ রাজনীতিক ঘোষণাই করে দিয়েছেন, ভোটে জিতলে তবেই খুলবেন মাস্ক। বিহারের রাজনৈতিক মহলের মতে, ভোটে পুষ্পমের দল কতটা প্রভাব ফেলবে, তা ভবিষ্যত বলবে। কিন্তু রাজ্যে যে তিনি রাজনীতির নয়া ‘ব্র্যান্ড’ নিয়ে এসেছেন, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
পুষ্পম প্রিয়ার পরিবারে অবশ্য রাজনীতি নতুন নয়। তাঁর বাবা বিনোদকুমার চৌধুরী ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক। কাকা বিনয়ও গত বিধানসভা নির্বাচনে বেণিপুর থেকে জেডিইউয়ের টিকিটে জিতে বিধায়ক হন। পুষ্পমের ঠাকুরদা উমাকান্ত চৌধুরী ছিলেন নীতীশ কুমারের ঘনিষ্ঠ ও সমতা পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ৩৮ বছর বয়সি পুষ্পম দ্বারভাঙায় স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে স্নাতকস্তরের পড়াশোনার জন্য পুনেতে যান। এরপর ব্রিটেনে পাড়ি দেন তিনি। সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। রাজনীতিতে যোগদানের আগে কিছুদিন বিহার সরকারের পর্যটন ও স্বাস্থ্য দপ্তরের পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করেছেন। প্রচারে বেরিয়ে জাতপাতের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে খোলাখুলি উন্নয়নের পক্ষে সওয়াল করছেন পুষ্পম। একই কারণে দলের ২৪৩ জন প্রার্থীই তাঁদের মনোনয়নপত্রে ধর্মের জায়গায় ‘বিহার’ বলে উল্লেখ করেছেন।
পুষ্পমের কথায়, ‘প্লুরালস মানে সব ধর্ম ও জাতের মানুষ একসঙ্গে রাজত্ব করবে। আমাদের দলের লক্ষ্য মানুষের সমস্যা তুলে ধরা ও তার সমাধান করা।’ তাঁর মতে, আরও বেশি উচ্চশিক্ষিত যুবক-যুবতী রাজনীতিতে আসলে তা দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক হবে। - ফাইল চিত্র