• স্বপ্নাদেশ পেয়ে জিরানপুরে বামাকালীর পুজো করেন মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ
    বর্তমান | ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় , কোচবিহার:

    তখন কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ। কথিত আছে তিনি মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। তাঁর সেই স্বপ্নাদেশ অনুসারেই কোচবিহারের জিরানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোঁসাইগঞ্জে রাজ আমল চলছে বামাকালীর পুজো। এখানে মায়ের অষ্টধাতুর বিগ্রহে হয় নিত্যপুজো। কালীপুজোর সময় হয় বিশেষ পুজো। একসময় এই এলাকার পাশ দিয়ে বইত তোর্সা নদী। এলাকাটি ছিল জঙ্গলে ভরা। তবে আশপাশে সমৃদ্ধ জনপদও ছিল। তারই মাঝে জিরানপুরের ছোট্ট গ্রাম গোঁসাইগঞ্জ। শান্ত নিরিবিলি গ্রামীণ পরিবেশের মধ্যে ছোট্ট এই মন্দিরটির মাহাত্ম্য অনেক। রাজ আমলের বিগ্রহ সম্বলিত এই মন্দিরটি তাই গ্রামবাসী ও কোচবিহারবাসীর আবেগের সঙ্গে জড়িত। 

    বামাকালী মন্দিরে বংশপরম্পরায় পুজো করে আসছেন শংকর দেবশর্মা। তিনি বলেন, মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ ভূপবাহাদুর স্বপাদেশ পেয়েছিলেন। তিনিই এখানে বামাকালীর অষ্টধাতুর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অষ্টধাতুর সেই বিগ্রহ এখনও এখানে আছে। বিগ্রহটি প্রায় ১৮ ইঞ্চি লম্বা। মা এখানে চুর্তভুজা। মায়ের গলায় মুণ্ডমালা। নীচে মহাদেব শায়িত। মা এখানে নিত্যপূজিতা হন। দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের অধীনে এই পুজো চলে। ভক্তরা বলি দিতে চাইলে দিতে পারেন। 

    কোচবিহারের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক দেবব্রত চাকি বলেন, জিরানপুরের গোঁসাইগঞ্জের বামাকালীর পুজো শতবছরের পুরনো। পাশ দিয়ে তোর্সা ও মরা মানসাই নদী প্রবাহিত হতো। এখানে দুই নদীর বিরাট প্রবাহ ছিল। তার পাশেই এই বামাকালীর মন্দির। রাজ আমলে এখানে অষ্টধাতুর প্রতিমায় নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো হতো। আজও সেই রীতি পালিত হয়ে আসছে। 

    বলরামপুর, জিরানপুর, নাজিরহাট সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় বহু প্রাচীনকাল থেকেই ছিল মানুষের বসবাস। মহারাজারা বিভিন্ন সময়ে নদীপথে ওই সব এলাকায় যেতেন। কোনও একসময়ে মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ ভূপবাহাদুর জিরানপুরে গিয়েছিলেন। সেখানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন বলেও কথিত আছে। তিনি নিজেও এই বিগ্রহে পুজো দিয়েছেন। প্রথম অবস্থায় মন্দিরটি খড়ের চালা ঘর ছিল। তারপর কালক্রমে সেটি টিনের ছাউনি দেওয়া মন্দির হয়। প্রায় ২০-২৫ বছর আগে মন্দিরটি পাকা হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত মন্দিরটিতে সারা বছরই ভক্ত সমাগম হয়। কিন্তু কালীপুজোর সময়ে বড় করে পুজোর আয়োজন হয়। মন্দিরে মহারাজার আমলের যে বিগ্রহ রয়েছে তাতেই পুজো হয়। আলাদা কোনও প্রতিমাতে পুজো করা হয় না। যদি কোনও ভক্তের মনস্কামনা পূরণ হয় তাহলে তাঁরা বলির আয়োজন করেন। এছাড়া মন্দিরের উদ্যোগে কোনও বলি হয় না।  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)