• শাঁখা কিনে পরেছিলেন স্বয়ং কালী! মানিকরার পুজোয় জড়িয়ে একাধিক অলৌকিক কাহিনি
    বর্তমান | ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, মালদহ ও হবিবপুর: মালদহের পূর্বদিকে হবিবপুর ব্লকের জাজইল গ্রাম পঞ্চায়েতের মানিকরা গ্রামটি ভৌগলিকভাবে অনেকের অচেনা হতে পারে। কিন্তু সেখানকার বিখ্যাত কালীপুজো নিয়ে রয়েছে একাধিক অলৌকিক কাহিনি। তাই এই পুজো দেখতে এবং পশুবলি দিতে পড়ে লম্বা লাইন। প্রাণপ্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে এখানে দেবী জাগ্রত হয়ে ভক্তদের পুজো গ্রহণ করেন। পূর্ণ করেন তাঁদের হৃদয়ের বাসনা। তাই পুষ্প, বিল্বপত্রের সঙ্গে ভক্তরা এখানে পুজো দেন গভীর বিশ্বাস এবং আকুতি সম্বল করেও।

    মালদহ জেলার বেশকিছু ঐতিহ্যবাহী কালীপুজোর মধ্যে অন্যতম মানিকরা কালী। এই কালী নিয়ে বহু অলৌকিক ঘটনা কথিত রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় তিনশো বছর ধরে এই পুজো হয়ে আসছে পরম্পরা মেনে। অবিভক্ত ভারতবর্ষে তৎকালীন ঘন জঙ্গলের মধ্যে এক ডাকাতের দল প্রথম এই পুজো শুরু করে। রাতে মশাল জ্বালিয়ে কালীমায়ের পুজো শুরু করেছিল বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দেওয়া দুর্ধর্ষ সব ডাকাতরা। পরবর্তীতে পুজোর দায়িত্বভার নেন তিলাসন এলাকার জমিদার। জমিদারি প্রথা অবলুপ্ত হওয়ায় বর্তমানে দায়িত্ব নিয়েছেন গ্রামবাসীরা।

    স্থানীয় বাসিন্দা অশোক মজুমদার জানান, মানিকরার কালীপুজোকে কেন্দ্র করে একাধিক অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী রয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। বহু বছর আগে গ্রামে এক শাঁখারি শাঁখা বিক্রি করতে এসেছিলেন। তিনি মন্দিরে বসে থাকার সময় এক গ্রাম্য বধূ শাঁখা পরতে যান। শাঁখা পরার পর বধূ তাঁকে জানান, এই মন্দিরের পুরোহিত আমার বাবা। তাঁকে বলো তোমার মেয়ে শাঁখা পড়েছে। তাহলে তিনি তোমায় এর মূল্য দিয়ে দেবেন। কিছুক্ষণ পর শাঁখারি বিষয়টি জানিয়ে মন্দিরের পুরোহিতের কাছে দাম চান। কিন্তু পুরোহিত জানান, তাঁর কোনও মেয়ে নেই। এরই মধ্যে মন্দিরের পার্শ্ববর্তী পুকুরে ডুবন্ত অবস্থায় হাত তুলে শাঁখা, পলা দেখান স্বয়ং কালী। 

    পরম্পরা মেনে আজও সারারাত ব্যাপী মায়ের দুই পাশে দু’টি মশাল জ্বালিয়ে পুজো সম্পন্ন হয় মন্দিরে। পুজোকে কেন্দ্র করে বরাবর এখানে বলিপ্রথা চালু রয়েছে। গত বছর পর্যন্ত প্রচুর পাঁঠা বলি হয়েছে। তাছাড়া পায়রা, কুমড়ো বলি প্রথাও চালু রয়েছে। পুজো কমিটির সম্পাদক মৃন্ময় রায় জানান, পুজোকে কেন্দ্র করে সাতদিন মেলা বসে মন্দির প্রাঙ্গণে। প্রত্যেক দিন সাঁওতালি ও বাংলা ভাষায় পঞ্চরস সহ নাচ, গানের আসর বসে। মায়ের দর্শনে বিভিন্ন প্রান্তের প্রচুর মানুষ ছুটে আসেন মন্দির চত্বরে।  
  • Link to this news (বর্তমান)