আজ কালীপুজো। শক্তির আরাধনায় গোটা রাজ্যের পাশাপাশি মাতবে ‘কালীক্ষেত্র’ বীরভূম জেলাও। তার আগে থেকেই আলোর রোশনাইয়ে ভাসতে শুরু করল বীরভূম। বিভিন্ন পাড়া, ক্লাব থেকে শুরু করে শতাব্দী প্রাচীন পুজোগুলির প্রস্তুতি ছিল চরমে। দুর্গাপুজোর মতো কালীপুজোতেও থিমের আয়োজন করেছে সিউড়ির একাধিক পুজো উদ্যোক্তা।
লালমাটির এই জেলায় রয়েছে মোট পাঁচটি সতীপীঠ। এছাড়াও বীরভূমের আনাচে কানাচে রয়েছে বহু শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যপূর্ণ কালীমন্দির। এই মন্দিরগুলি শুধুমাত্র ধর্মস্থান নয়, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও অলৌকিক ঘটনার সাক্ষীও বটে। সে সব মন্দির এতটাই জনপ্রিয় যে, সারাবছর দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। সেইসব মন্দিরের পুজোর সঙ্গে মিশে রয়েছে নানা লোকগাঁথা। যেমন, সিউড়ির ইন্দ্রগাছা গ্রামে বামা কালীপুজোর বয়স প্রায় ৫০০ বছরের বেশি।
পুজো কমিটির সদস্য কানাই মণ্ডল বলেন, স্থানীয় হরকুনার গভীর জঙ্গলে সাধনা করতে গিয়ে একদিন এক সাধক কালী মায়ের সাক্ষাৎ পান। তাঁর সেই রূপ তিনি সঙ্গে সঙ্গে নিজের কাছে থাকা থালায় এঁকে নেন। মায়ের সেই জীবন্ত রূপের ছবি দেখে বানানো হয় তাঁর মাটির মূর্তি। এই মা কালীই বামা কালী। যে থালায় মায়ের জীবন্ত রূপ দেখে ছবি এঁকেছিলেন সাধক, সেই থালা সযত্নে রাখা আছে আরও। পুজোর রীতিনীতিও বেশ ভিন্ন। এখানে প্রতিমার গায়ে রং করা ও চক্ষুদানের কাজ হয় পুজোর দিনেই। কাঠে আগুন জ্বালিয়ে যে ভুসোকালি তৈরি হয়, তা দিয়েই কালো রং করা হয় মায়ের গায়ে। প্রায় ৬০জন মানুষ ৪০ ফুট লম্বা কাঠের বেদীতে চাপিয়ে প্রতিমাকে মূল মন্দিরে আনার পরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। মন্দির চত্বরে পালা গান শোনানো হয় মাকে। সেই যাত্রা শুনে তবেই পুজো গ্রহণ করেন তিনি। পুজো শুরু হয় পরেরদিন সকাল ৬টায়। বহু বছর ধরে এই নিয়মেই চলে আসছে পুজো। যাকে ঘিরে কালীপুজোয় গভীর রাতে মানুষের ঢল নামে ইন্দ্রগাছা গ্রামে।
কালীপুজো উপলক্ষ্যে বীরভুমের সাঁইথিয়ার নিরিশা গ্রামেও ব্যাপক লোক সমাগম হয়। পুজোর দিনে চক্ষুদানের পরে মুহূর্তের মধ্যেই মা-কে মন্দিরে এনে প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা দেখতে সেখানে গভীর রাতেও ভিড় করেন বহু মানুষ। কথিত আছে, প্রতি বছর প্রতিমা তৈরির কারিগর বদলে গেলেও বদলায় না মায়ের মুখমণ্ডল। মায়ের রূপ একই থাকে।
লাভপুরের কুঁয়ে নদীর তীরে পানপাড়া বলে একটি গ্রাম ছিল। ফি বছর বন্যায় অতিষ্ঠ হয়ে মা কালীর পুজো শুরু করেছিলেন বাসিন্দারা। বন্যায় গ্রাম ধূলিসাৎ হয়ে গেলেও গ্রামরক্ষার উদ্দেশে প্রচলিত কালীপুজো রয়ে গিয়েছে আজও। লাভপুরের দোনাইপুর কালী মন্দিরে আবার একই সঙ্গে তিন কালী প্রতিমার পুজো করা হয়। কয়েকশ পাঁঠা বলি হয় মন্দির চত্বরে। প্রাচীন পুজোর সঙ্গে টেক্কা দিচ্ছে আধুনিক থিমের পুজোও। আলোতেও থাকছে চমক। সিউড়ির ত্রাণ সমিতি এবছর কথাকলি নাচের বিভিন্ন আঙ্গিক নিজেদের থিমের মাধ্যমে তুলে ধরেছে। প্রতিবিম্ব ক্লাবের এবারের থিম ‘পুরুষোত্তম’। টাউন ক্লাবে