স্ত্রীর পাশে শুয়েই প্রেমিকার সঙ্গে ভিডিও কল অভিযুক্তের
বর্তমান | ২০ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: স্ত্রীর পাশে শুয়ে প্রেমিকাকে ভিডিও কল করত মেমারির হাটবাকসা গ্রামের মুকুল শেখ। স্ত্রী আসমাতারা খাতুনকে জলে ডুবিয়ে মারার অভিযোগে শনিবার মেমারি থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। মৃতার বাপেরবাড়ির লোকজনদের অভিযোগ, মুকুলের সঙ্গে এক বছর আগে এক মহিলার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপর থেকেই সে স্ত্রীর উপর অত্যাচার করতে থাকে। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাঁকে মারধর করা হতো। মুকুল বাড়িতে তাঁর সামনেই প্রেমিকার সঙ্গে ফোনে কথা বলত। গভীর রাত পর্যন্ত ভিডিও কল করত। প্রতিবাদ করলেই মারধর করা হতো। প্রথমদিকে আসমাতারা সব মুখ বুজে মেনে নিয়েছিলেন। পরে তিনি বিষয়টি পরিবারের লোকজনদের জানিয়েছিলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ধৃতকে জেরা করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে মুকুল নিজে চারচাকা গাড়ি চালিয়ে স্ত্রী’কে বর্ধমানে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যায়। রাত ৮টা নাগাদ তারা মেমারিতে ফিরে আসে। আসমাতারা ফোন করে সেই কথা বাড়িতে জানান। তার প্রায় এক ঘণ্টা পর বাড়ির লোকজন জানতে পারেন, চারচাকা গাড়িটি ঘোষগ্রামের পুকুরে পড়ে গিয়েছে। তাঁরা তড়িঘড়ি এসে দেখেন, মুকুল পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার প্যান্ট ভিজে গিয়েছে। সে দাবি করে, আসমাতারা গাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। গ্রামবাসীরা পুকুরে নেমে দেখেন, তিনি গাড়িতে নেই। এরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে পুকুরে খোঁজাখুজি শুরু করে। পুকুরে জাল ফেলা হয়। বেশ কিছুক্ষণ পর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মুকুলের দাবি, বাঁকে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি। পুকুরের জলে গাড়ি নেমে যায়। এটা নিছকই দুর্ঘটনা। যদিও স্থানীয়রা তার কথা বিশ্বাস করতে রাজি হননি। মৃতার পরিবারের লোকজন মেমারি থানায় মুকুলের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করেন। পুলিশ ধৃতকে হেপাজতে নিয়ে জেরা করছে। ওই গৃহবধূর এক আত্মীয় বলেন, মুকুলের সঙ্গে যে মহিলার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল তার একাধিকবার বিয়ে হয়েছে। মুকুল সবটাই জানত। তারপরও তার সঙ্গে সে সম্পর্ক গড়ে তোলে। গত কয়েকমাসে বিষয়টি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছে যায়। গ্রামেই সে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করত। আসমাতারা ওদের দু’জনকে বেশ কয়েকবার একসঙ্গে দেখে। তবে, মুকুল কোনও কিছুই পরোয়া করত না। আসমাতারা তার অত্যাচারেই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। সামনে থেকে প্রেমিকাকে ফোন করার বিষয়টি তিনি কোনওভাবেই মেনে নিতে পারেননি। তাই পথের কাঁটা সরানোর জন্যই মুকুল স্ত্রীকে পরিকল্পনামাফিক খুন করে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত জেরায় বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সে যে যুক্তি দিচ্ছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রয়োজনে তাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে।