বর্ধমান শহরে ফ্ল্যাট নিয়ে চরম দুর্ভোগে মধ্যবিত্তরা
বর্তমান | ২০ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: বর্ধমান শহরে কষ্টার্জিত টাকায় ফ্ল্যাট কিনছেন বহু মধ্যবিত্ত। কেউ কেউ আবার সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে ফ্ল্যাট কিনে সুখী গৃহকোণের পরিকল্পনা করছেন। কেনার আগে প্রমোটাররা ঝাঁ চকচকে আবাসন দেওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। কিন্তু, হাত বদলের পর বহু ক্রেতার মাথায় হাত পড়ে যাচ্ছে। টাকা নেওয়ার পর বহু শর্তই প্রমোটাররা মানছেন না। আবার কেউ কেউ চুক্তিপত্রে কৌশলে বিভিন্ন ‘ফাঁক’ রেখে দিচ্ছেন। বিশ্বাস করে অনেকেই তা না পড়েই রেজিস্ট্রি করছেন। পরে প্রমোটারকে সমস্যার কথা বলতে গেলেই তাঁরা চুক্তিপত্র দেখাচ্ছেন। এরকমই নানা অভিযোগ নিয়ে বর্ধমান পুরসভায় দ্বারস্থ হচ্ছেন ক্রেতারা। প্রায় দিনই বসছে শুনানি। লাগাতার অভিযোগ আসায় নাজেহাল পুরসভা কর্তৃপক্ষ।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন আগে ২০ থেকে ২৫জন এসে অভিযোগ করেন প্রমোটার তাঁদেরকে সামনের দিকে গ্যারেজ দেওয়ার কথা বলেছিল। সেই শর্ত তিনি মানেননি। ফ্ল্যাটের পিছনে গ্যারেজ দেওয়া হচ্ছে। বাইক রাখার জায়গা ছোট। ফ্ল্যাটের সামনের দিকে পার্কিংয়ের জায়গা প্রমোটারের লোকজন নিয়েছেন। এক ক্রেতা বলেন, মাত্র তিন বছর আগে ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। এরমধ্যেই পলেস্তরা খসে পড়ছে। শৌচালয় থেকে গন্ধ আসছে। ভাতছালায় আমরা আরও একটা ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। সেখানেও সব শর্ত মানা হয়নি। প্রমোটাররা ফ্ল্যাট দেওয়ার আগে এক রকম ‘ড্রয়িং’ দেখায়, হাতবদলের সময় তা পাল্টে যায়। কোনও কোনও আবাসনের সিঁড়ি এত ছোট করা হচ্ছে জিনিসপত্র তুলতে সমস্যা হয়। বুকিংয়ের আগে বড় সিঁড়ির নকশা দেখানো হয়েছিল।
এক আধিকারিক বলেন, যে কোনও ফ্ল্যাট নেওয়ার আগে প্রমোটারের চুক্তিপত্র খুব খুঁটিয়ে পড়া দরকার। সেখানে তাঁরা নানা কারসাজি করে রাখে। অনেকেই ভালোভাবে না পড়েই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। তার ফলে সমস্যা হলেও তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন না। তবে সব প্রমোটার অনিয়ম করে এটা ঠিক নয়। অনেকে চুক্তিমতোই কাজ করেন। এসব ক্ষেত্রে ক্রেতাদের সমস্যা হয় না। তাঁদের ফ্ল্যাটগুলি তাড়াতাড়ি বিক্রিও হয়ে যায়। তবে এক শ্রেণির প্রমোটারদের কালো তালিকাভুক্ত করা উচিত। তাঁদের আবাসন তৈরির জন্য ছাড়পত্র দেওয়া উচিত নয়।
বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ সরকার বলেন, এক শ্রেণির প্রমোটারের ক্রেতাদের ঠকানোই মূল উদ্দেশ্যে হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা কোনও নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। তাঁদের চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পুরসভা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বর্ধমান শহরে ফ্ল্যাটের দাম এখন কলকাতাকে টক্কর দিচ্ছে। অবস্থানগত কারণের জন্য বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা এখানে ফ্ল্যাট কিনছেন। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও উর্ধ্বমুখী। ক্রেতারা বলছেন, দাম বেশি দিয়েও ভালো মানের আবাসন পাওয়া যাচ্ছে না। কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে তা কেনার পর পস্তাতে হচ্ছে।