নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া ও কলকাতা: বাংলাদেশ থেকে জাল নোট এনে রাজ্যে ছড়ানোর ছক। বাবা-ছেলে মিলে ফেঁদে বসেছিল এই কারবার। সীমান্তের ওপারে জাল নোটের কারবারিরা মূলত পাঁচশো টাকার নকল নোট ছড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছিল তাদের। রাজমিস্ত্রির কাজের আড়ালে দুজন মিলে বিভিন্ন জায়গায় জাল নোট পাচার করত বলে অভিযোগ। হাওড়ায় জাল নোট ছড়াতে এসে শেষপর্যন্ত গোলাবাড়ি থানার পুলিশের হাতে শনিবার সন্ধ্যায় ধরা পড়ে গেল—বাবা সুমন মণ্ডল ও ছেলে রাজু মণ্ডল। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৮ হাজার টাকার জাল নোট।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিল বাবা ও ছেলে। তারা একটি দোকানে কিছু জিনিস কেনার পর পাঁচশো টাকার নোট দেয়। কিন্তু নোটটি দেখে সন্দেহ হওয়ায় ওই দোকানদার নিতে চাননি। এই নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। আরও কয়েকটি দোকানে তারা পাঁচশো টাকার নোট চালানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু কেউ তা নিতে চাইছিলেন না। সন্দেহ হওয়ায় গোলাবাড়ি থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে দুজনকে আটক করে এবং থানায় নিয়ে যায়। জেরা করে জানা যায়, তারা বাবা ও ছেলে। বাদুড়িয়া থানার চাতরায় তাদের বাড়ি। তল্লাশি চালাতেই তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় জাল নোট।
এই নকল নোট তারা কোথা থেকে পেল জানতে জেরা শুরু হয়। প্রথমে তারা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। দুজনেরই দাবি, তারা রাজমিস্ত্রির কাজ করে। পেমেন্ট হিসেবে তাদের এই টাকা দেওয়া হয়েছে। পুলিশের দাবি, দীর্ঘ জেরায় শেষমেশ ভেঙেই পড়ে তারা এবং জানায়, তাদের বাড়ি সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চলে। বাংলাদেশে তাদের অবৈধ যাতায়াত রয়েছে। সেখানে জাল নোটের কারবারে জড়িত লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ আছে তাদের। সীমান্তের ওপারের নকল নোটের কারবারিরা এগুলি তাদের দিয়ে এই রাজ্যে পাঠাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে কেরিয়ার মারফত সীমান্তে তাদের কাছে ডেলিভারি করছে এই নোট। তাদের হাত ঘুরে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে এই জাল টাকা যাচ্ছে। তারাই বিভিন্ন জায়গায় এই নোট পৌঁছে দিচ্ছে।
তবে সীমান্তে তাদের মাথায় এক বড়ো কারবারি রয়েছে। এরাজ্যে গোটা কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে সে-ই। এই কীর্তিমান মানিকজোড়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল স্টেশন ও বাজার সংলগ্ন এলাকায় জাল নোট ছড়ানোর। তদন্তে উঠে এসেছে, বাবা সুমন দক্ষিণ ভারতে রাজমিস্ত্রির কাজে গিয়েছে। তখন তার মাধ্যমে জাল নোট হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরুসহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়েছে। তার সঙ্গে কাজ করা রাজমিস্ত্রিদের মাধ্যমে লোকাল মার্কেটে ছড়ানো হতো সেসব। জেরায় এই বাবা-ছেলে দুজনেই জানিয়েছে, বড়ো মাথার নির্দেশমতোই তারা হাওড়া স্টেশন এলাকায় জাল নোট ছড়াতে এসেছিল। এই কারবারের মূল মাথা কারা? ধৃতদের জেরা করে তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। ধৃত দুজনকেই রবিবার হাওড়া জেলা আদালতে তোলা হয়। তাদের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।