সাড়ে আটশোয় একে ৪৭, অটোমেটিক পিস্তল ৩৫০, ‘বন্দুক’ কিনতে উপচে পড়া ভিড় শহরের বাজি বাজারে
বর্তমান | ২০ অক্টোবর ২০২৫
সোহম কর, কলকাতা: কালীপুজোয় একটা ‘একে ৪৭’ হাতে থাকলে আর পায় কে? কখনও পুষ্পা। কখনও শাহরুখ খান। বন্দুক কাঁধে প্যান্ডেলে গিয়ে একটু কেত দিয়ে দাঁড়ালেই ‘জিও গুরু।’ তাই কালিকাপুর বাজি বাজারে দেখার সঙ্গে সঙ্গে, ‘ওই যে একে, ওই তো একে ৪৭!’ সেটির দাম, সাড়ে ৮০০ টাকা। শুনেই বাবা বললেন, ‘ও পাখি মারার বন্দুক। অন্য বন্দুক কিনলে হয় না।’ ছেলের মুখ ব্যাজার। কিনলে এটাই কিনতে হবে। অতএব কড়কড়ে সাড়ে ৮০০ পকেট থেকে খসলো। কিনে দিতেই প্যাকেট ছিঁড়ে বন্দুক উঠল পুত্রের কাঁধে। চলল সিনেমার হিরোর মতো পোজ দেওয়া। ছবিও তুলতে হল। সেগুলি ফেসবুকে আজই দিতে হবে। রবিবার কালিকাপুর বাজি বাজারে ক্যাপ ফাটানোর বন্দুক নিয়ে এমন একের পর এক সিন। যা কোনও সিনেমার থেকে কম নয়।
দোকানদার বললেন একে ৪৭ ছাড়াও অনেক রকমের গান আছে। বলেই আর একখানা বাক্স আনলেন। থার্মোকলের মধ্যে রাখা সুদৃশ্য একটি ‘অটোমেটিক পিস্তল’। এই ক্যাপ বন্দুকের দাম, সাড়ে তিনশো টাকা। আর একদম হালকা ওজনের ক্যাপ বন্দুকগুলির দাম, ষাট টাকা। আর বন্দুকগুলির গুলি অর্থাৎ ক্যাপের দাম কত? বড় প্যাকেটের দাম ৫০০ টাকা। একটি রোল নিয়ে বড় প্যাকেট। একটি রোলে থাকে ১০টি ক্যাপের ছোট বাক্স। রোলের দাম ৬০ টাকা। রবিবার কালীপুজোর শেষলগ্নে ই এম বাইপাসের ধারে কালিকাপুর বাজি বাজারে বন্দুক কেনাকাটি চলল দেদার। সঙ্গে অবশ্য বহুরকম নতুন ধরনের বাজিও বিক্রি হল।
নতুন আমদানিকৃত বাজির নাম হল, ‘ক্যান বাজি’। ঠান্ডা পানীয়ের নিরীহ ক্যান। তবে হাতে নিয়ে ক্যানের উপরে থাকা চাবি টানলেই বের হবে সলতে। সেখানে আগুন দিলেই তুবড়ির মতো আগুন ছড়াবে। ফাটবে। দাম, ১২০ টাকা। রবিবার সকাল থেকে ভিড় জমেছে বাজারে। বাজি ব্যবসায়ীরা দু’হাত তুলে ধন্যবাদ দিচ্ছে আবহাওয়াকে। মুখে বলছেন, ‘কাল পর্যন্ত যদি এরকম রোদ থাকে তাহলেই হবে। বাজার মস্ত চলছে।’ এমনিতে প্রথম তিনদিন খুব একটা ব্যবসা হয়নি বলে দোকানদারদের বক্তব্য। শনিবার থেকে বিক্রি ভালো হচ্ছে। ফলে দোকানের ভাড়া, কর্মচারীদের পারিশ্রমিক দিয়েও ভালো লাভ উঠে আসবে বলে আশা তাঁদের। ‘আমাদের এখানে সবটাই সবুজ বাজি বলে দাম একটু বেশি থাকে,’ বক্তব্য এক দোকানদারের। ইস্ট ডিভিশন বাজি বাজারের সম্পাদক শ্যামাপ্রসাদ মজুমদার বলেন, ‘এখানে ৩৬টি দোকান বসেছে। বহু দূর থেকে মানুষ বাজি কিনতে আসছেন। ব্যবসা ভালো হচ্ছে। ২১ তারিখ পর্যন্ত বাজার চলবে।’
কালিকাপুরের মতোই টালা, শহিদ মিনার ও বেহালাতেও বাজি বাজার চলছে। সেখানকার দৃশ্য প্রায় একইরকম। বাজি কেনার যেন ধুম পড়েছে শহরে। গাড়ির ডিকি ভর্তি করে কিনে নিয়ে যাচ্ছে লোকজন। রাতের আকাশ দিন করে তবে ছাড়বে।