• পুরোহিত-ঢাকি-ভোগ! মুশকিল আসান এক ফোনেই, পুজোতেও এবার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট
    বর্তমান | ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • শুভদীপ রায়, কলকাতা:

    নির্মলা সেন ও অভয় সেন বৃদ্ধ দম্পতি। থাকেন দমদমে। একমাত্র ছেলে পরিবার নিয়ে ভিনরাজ্যে থাকেন। পারিশ্রমিকের পরিবর্তে বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সংসারের বাজার-দোকান-ওষুধপত্র এনে দেন একজন। নির্মলাদেবীর বাড়ি লক্ষ্মীপুজো হয়। এবছর দু’জনেরই শরীর খারাপ বলে পুজো হবে না বলে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ছেলে অনুপমকে জানিয়েওছিলেন সে কথা। গৃহস্থ বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো মানে একটি সেন্টিমেন্ট। 

    ছেলে যেহেতু আইটি কর্মী। টেক স্যাভি। ভাবলেন, ডিজিটাল যুগে সব মুশকিল যখন এক ক্লিকে আসান হয়ে যায়, তখন পুজো করার লোক মিলবে না? একটু খোঁজ করে দেখলেন বাংলাতে এমন কিছু সংস্থা আছে যারা দায়িত্ব নিয়ে পুজো সম্পন্ন করে দেয়। বাজার থেকে শুরু করে ভোগ রান্না, ঘর সাজানো থেকে শুরু করে প্রতিমা নিয়ে আসা, যাবতীয় আবশ্যকীয় কাজ টাকার বিনিময়ে সামলে দেওয়ার কোম্পানি আছে। 

    কালীপুজোর আগে এমনই এক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন স্মিতা মজুমদার। তিনি পরিবার সমেত বিদেশে থাকেন দীর্ঘদিন ধরে। কলকাতায় এসেছেন বাড়ির কালীপুজোয়। এদিকে হাতে সময় কম। যোগাযোগ করলেন একটি সংস্থার সঙ্গে। তারা ভোগ রান্না থেকে, ঠাকুর আনা। শাস্ত্রজ্ঞ পুরোহিতের ব্যবস্থা করা থেকে পাত পেড়ে বসে খাওয়ানোর ব্যবস্থা সবই করে দেবে। স্মিতাদেবী টাকা দিয়ে খালাস। নিশ্চিন্ত।

    কলকাতায় এমন এক সংস্থা চালান নিলাদ্রী চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তি। তারা এ বছর চারটি আবাসনে দুর্গাপুজো করেছে। কালীপুজোর বরাতও পেয়েছে। লক্ষ্মীপুজোর সময় চাপ সবথেকে বেশি ছিল। তাই থাকে বরাবর। নিলাদ্রিবাবু জানান, মোট ২৬ জায়গায় লক্ষ্মীপুজো করেছেন তাঁরা। এর মধ্যে অনেক বাড়ির পরিস্থিতিই নির্মলাদেবীর মতো। অর্থাৎ সাধ-সামর্থ্য সবই আছে কিন্তু লোকবল নেই। ফলে পুজো নিয়ে দুশ্চিন্তা। তাঁদের কাছে মুশকিল আসান নিলাদ্রিবাবুদের কোম্পানির মতো কিছু সংস্থা। পুজোর পাশাপাশি তারা বিয়ে, উপনয়ন বা শ্রাদ্ধানুষ্ঠানও করে। নিলাদ্রি বলেন, ‘আমাদের কাছে পুজোর নিয়ম, আচাররক্ষাই মুখ্য। ভক্তিভরে সেটাই করতে চাই।’ 

    এই সংস্থাগুলি গ্রাহকদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্যাকেজ রেখেছে। নিলাদ্রিদের যেমন বেসিক থেকে প্রিমিয়াম হরেক প্যাকেজ আছে। প্রতিমার আয়তন, ভোগের আইটেমের সংখ্যা, ঢাকির সংখ্যা ইত্যাদি অনুযায়ী টাকার অংক বাড়ে-কমে। কোনও ক্রেতা চাইলে প্যাকেজ নিজের অনুযায়ী সাজিয়েও নিতে পারেন।

    শেষপর্যন্ত নির্মলাদেবী ও অভয়বাবুর বাড়ি লক্ষ্মীপুজো হয়েছে। নিমন্ত্রিতরা পেট পুরে খিচুড়ি-চচ্চড়ি-লুচি-পায়েসের ভোগ খেয়েছেন। ছেলে কাজের চাপে আসতে পারেননি। তবে আত্মীয়স্বজনে ভরে গিয়েছিল দমদমের ফ্ল্যাট। মুখে হাসি বৃদ্ধ দম্পতির।
  • Link to this news (বর্তমান)