নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কালীপুজো মানে উত্তর কলকাতা। বহুবছর ধরে এভাবেই সমার্থক হয়ে উঠেছে বিষয়টি। তাই দুর্গাপুজোর সময় আগে উত্তর না আগে দক্ষিণ, এমন আলোচনা থাকলেও কালীপুজোয় সেসবের অবকাশ কম। কারণ আমহার্স্ট স্ট্রিট চত্বরে ঢুকে পড়তে পারলেই ‘জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি’ বলে আলোয় ভেসে যাওয়া যায়। রবিবার বিকেল থেকেই শহর ও শহরতলির মানুষ ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়েছেন। মেট্রোতে আলোচনার বিষয়ই হল, ‘আগে গিরিশ পার্কে যাবে নাকি আমহার্স্ট স্ট্রিট?’ ঠিক এমন সময় দুর্গাপুজোর সময় কে ভালো ‘নর্থ’ ঘুরিয়েছিল, সে লোকটির ডাক পড়ে। দক্ষিণ চেনা মানুষরা কটাক্ষ ছুড়ে দেন, ‘দুর্গাপুজোর মতো করে কালীপুজো ঘুরলে হবে না কিন্তু।’
এমন সব আলোচনা করতে করতে এমজি রোড মেট্রো স্টেশনে নেমে ‘ফাটাকেষ্ট’ দিয়েই শুরু করল বাঘাযতীনের একদল তরুণ-তরুণী। মেট্রো থেকে নেমে আমহার্স্ট স্ট্রিটের দিকে হাঁটা শুরু করতেই অনেকে বলতে শুরু করলেন, ‘আর কতদূর?’ এই কথা শেষ হতে না হতেই আকাশে দেখা গেল ঝুলছে থার্মোকলের চিংড়ি। সামনেই মোহনবাগান থিমের মণ্ডপ। শিল্ড জয়ের আনন্দ ভাগ করে নিলেন অনেকে। তারপরই ফাটাকেষ্ট। রাস্তাজুড়ে গ্রাফিতি। সেসব দেখে তরুণ-তরুণীরা মুগ্ধ। চলল ছবি তোলা। সেখান থেকে বেরিয়েই লোকমুখে পরিচিত ‘সোমেন মিত্রের পুজো’। তখন চারদিক থেকে মাইকে ভেসে এসে শ্যামা সঙ্গীত ক্রস কানেকশন তৈরি করেছে। শব্দের মাঝে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম হাতছানি দিচ্ছে। উত্সব বলে রাজনীতি থাকবে না? তা হতে পারে না। মণ্ডপের অদূরেই বাম ছাত্র-যুব আর বিজেপি বইয়ের দোকান খুলে গান বাজিয়েছে। সেসব পেরলে আবার বিরাট কালী প্রতিমা।
‘বলেছিলাম না, আমহার্স্ট স্ট্রিট আগে গেলেই সবচেয়ে ভালো। এরপর গিরিশ পার্কের ফাইভ স্টারে যাব। একদম মেট্রোর পাশে’, আমহার্স্ট স্ট্রিট চত্বর ঘুরে এমন মন্তব্য ছুড়ে দিলেন এক তরুণী। ‘দুর্গাপুজো হয়েছে। এবার কালীপুজোও হয়ে গেল। বাকি রইল বড়দিনের পার্ক স্ট্রিট। বেরনোর সময় মা বলছিল, তোরা তো কোনও পুজোই ছাড়বি না,’ বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হতেই একথা বললেন বরানগরের তনুশ্রী সাহা। কালীপুজোর প্ল্যান কী? এই প্রশ্নের উত্তর একেবারে ঠোঁটের ডগায়। প্রায় সমস্বরে তরুণীরা বলে উঠলেন, ‘কালীপুজোর দিন বারাসতে যাব। শুনেছি ওখানে দারুণ সব পুজো হয়। এই বছর সেটা দেখতেই হবে। ভিড় হোক। আমরা পুজোয় শ্রীভূমি ঘোরা লোকজন।’ শুধুই কি ঠাকুর দেখা, তার সঙ্গে বাজি ফাটানো হবে না নাকি? সেটাও হবে। বাজি ফাটানোর যে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছে আইন। ‘তাই নাকি?’ বলেই ঠাকুর দেখতে চলল বাঙালি।