• পুজোর আগের রাতে ঠাকুর দেখার ঢল, ‘স্তব্ধ’ বারাসত
    বর্তমান | ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • শ্যামলেন্দু গোস্বামী, বারাসত:

    সোমবার কালীপুজো। রবিবার সন্ধ্যা থেকেই ঠাকুর দেখার ঢল নামল বারাসত ও মধ্যমগ্রামে। বারাসতের কালীপুজো এমনিতেই বিখ্যাত এবং ভিড় টানার নিরিখে চমক দিয়ে আসছে বছর বছর। এ বছরও যে তার কোনও ব্যতিক্রম ঘটবে না, স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে রবিবারই। এদিন এত মানুষ ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়েন যে গোটা শহর কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। কমবেশি একই অবস্থা পাশের শহর মধ্যমগ্রামেরও। সন্ধ্যার পর এখন বাতালে হাল্কা হিমেল ভাব টের পাওয়া যাচ্ছে। ছাতিমের গন্ধে ভারী হয়ে উঠছে চারপাশ। কিন্তু প্যান্ডাল হপিংয়ের জন্য ভিড় ঠেলতে গিয়ে ঘেমেনেয়ে একসা হতে হয়েছে জনতাকে। কপালের ঘাম মুছতে মুছতেই কালী দর্শনে বেরিয়ে পড়া উৎসবমুখর মানুষ ভিড় জমিয়েছে আইসক্রিমের স্টলে। কেউ আবার দোকান থেকে ঠান্ডা জল কিনে গলায় ঢালার পর স্বস্তি পেয়েছেন। এভাবেই পুজোর আগে সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত তুমুল উৎসাহে চলল মণ্ডপ ও ঠাকুর দর্শন। কেউ এসেছেন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে। কেউ এসেছেন বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে। রবিবার হওয়ায় ভিড় আরও বেড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।  

    ভিড় সামাল দিতে প্রস্তুতির কোনও খামতি রাখেনি পুলিশ। বিভিন্ন রাস্তায় অস্থায়ী ব্যারিকেড করে জনসমুদ্র নিয়ন্ত্রণের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। কিন্তু সেই ব্যারিকড টপকেই অনেককে এগিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। অনেককে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘ভিড় এড়াতে আগের দিন এলাম। কিন্তু এসে বুঝতে পারছি, কোনও লাভ হয়নি! এর মধ্যেই ঠাকুর দেখতে হবে।’ তবে ভিড়ের কথা মাথায় রেখে অস্থায়ী শৌচালয়ের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে বিশেষত মহিলাদের।  

    বারাসতের নবপল্লি, সন্ধানী ক্লাব, সাউথ ভাটরা পল্লি, পাইওনিয়ার, কেএনসি সহ শহরের ছোটো-বড়ো বিভিন্ন প্যান্ডালে ভিড় জমছিল বিকেল থেকেই। সন্ধ্যার পর তা কার্যত জনপ্লাবনের চেহারা নেয়। এরপর রাত যত বেড়েছে, ততই থিকথিকে হয়েছে ভিড়। রকমারি থিমের মণ্ডপ, চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা আকর্ষণ করেছে হাজার হাজার দর্শনার্থীকে। অন্যান্য জেলা থেকেও অনেকে এদিন বারাসত ও মধ্যমগ্রামে ঠাকুর দেখতে চলে এসেছিলেন।  ভিড় শুধু মণ্ডপে ছিল বললে ভুল হবে! পাশাপাশি দুই শহরের ছোটো-বড়ো রেস্তরাঁ, ফাস্ট ফুডের দোকানগুলিতে কার্যত তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন মণ্ডপগুলিতে ভিড় তুলনামূলক বেশি হয়। টাকি রোড এবং যশোর রোডেও ভিড়ের ছবিটা কমবেশি একই ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। 

    বারাসতের কলোনি মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেড টপকাতে দেখা গেল এক তরুণীকে। তাঁকে সাহায্য করছিলেন তাঁর বন্ধু। কথায় কথায় বললেন, ‘এই ধরনের ব্যারিকেড আগে কখনও দেখিনি বারাসতের কালীপুজোয়। তবে ঠাকুর তো দেখতে হবেই। একটু কষ্ট করেই না হয় দেখলাম।’ টাকি রোডের আগুয়ান সংঘের মণ্ডপে দাঁড়িয়ে সপরিবার দেবব্রত সরকার বললেন, ‘এখন টাকি রোডের প্যান্ডালগুলো দেখে নিচ্ছি। কাল বেরব না। ভাইফোঁটার দিন কিছুটা ফাঁকা থাকবে। সেদিন সকাল সকাল বেরিয়ে ব্রিজের উল্টোদিকের পুজোগুলো দেখব।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)