নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: খোদ সল্টলেক শহরে পিটিয়ে খুন! সেক্টর-৩ এর এফ সি ব্লকের এই ঘটনায় ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে। যিনি খুন হয়েছেন, সেই প্রৌঢ় একজন ‘স্ট্রিট ডগ ফিডার’। পথকুকুরদের নিয়মিত খাবার দেন। তাদের জন্যই খাবার আনতে এসেছিলেন সল্টলেকে। যাঁর বাড়িতে এসেছিলেন, তাঁর গাড়ির চালক ও সঙ্গীসাথীরাই ওই ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করেছে বলে অভিযোগ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনি কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শনিবার সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম গৌতম প্রামাণিক (৫৭)। আনন্দপুরের ভিআইপি নগর এলাকায় তাঁর বাড়ি। কিন্তু, খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সল্টলেকের এফ সি ব্লকের একটি বাড়িতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক কর্ণধার থাকেন। গৌতমবাবু তাঁর বাড়িতে গিয়ে পথকুকুরদের জন্য খাবার নিয়ে আসতেন। তারপর সেই খাবার শহরের বিভিন্ন জায়গায় পথকুকুরদের খেতে দিতেন। অন্যান্য দিনের মতো গৌতমবাবু গত ১১ অক্টোবরও রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ সল্টলেক এফ সি ব্লকের ওই বাড়িতে আসেন। অভিযোগ, বাড়ির বাইরে তখন একটি অটোর মধ্যে ওই বাড়ির মালিকের গাড়ির চালক এবং তার সঙ্গীরা বসেছিল। গৌতমবাবুকে সামনে পেয়ে আচমকাই তারা তাঁর উপর চড়াও হয়। বেধড়ক মারধর করে। তাঁকে অচেতন করে রাস্তার উপর ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
ওই রাতেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় গৌতমবাবুকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর ব্রেন হেমারেজ হয়ে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারও করা হয়। কিন্তু জ্ঞান ফেরেনি। আইসিইইউ-তে ভর্তি ছিলেন তিনি। গত ১৪ অক্টোবর গৌতমবাবুর ছেলে বাবিন প্রামাণিক মারধর নিয়ে বিধাননগর দক্ষিণ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে গাড়িচালক সহ দু’জনের নাম উল্লেখ করেছিলেন অভিযুক্ত হিসেবে। ৩-৪ জন মিলে তাঁর বাবাকে মারধর করেছিল বলে জানান তিনি। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ গাড়ির চালক সহ দু’জনকে গ্রেফতারও করে। ঘটনার তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে শনিবার গৌতমবাবুর মৃত্যু হয়। তারপরই পিটিয়ে খুন নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়।
গৌতমবাবুর পরিবারের সদস্যদের থেকে পুলিশ জানতে পেরেছিল, পথকুকুরদের খাবার নিয়ে অভিযুক্ত চালক ও তার সঙ্গীরা নানা কারচুপি করত। তা নিয়ে গৌতমবাবু আগেও প্রতিবাদ করেছিলেন। সেই কারণেই তিনি বিষ নজরে পড়ে গিয়েছিলেন। মারধরও সেই কারণে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন তদন্তকারীরা। গৌতমবাবুর ছেলে রবিবারও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘যারা মারধর করেছিল, তারা বাবার কাছে টাকাও চাইত।’ তবে পুলিশ এখনও খুনের কারণ নিয়ে নিশ্চিত নয়।
এক আধিকারিক বলেন, ‘সকলেই তো একে অপরের চেনা। নিজেদের মধ্যে বিবাদ থেকে কিছু গোলমাল হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। তবে, সঠিক কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। ধৃতদের জেরা করা হচ্ছে। এই ঘটনার পিছনে অন্য কারও হাত রয়েছে কি না, পুরোনো কোনও আক্রোশ কাজ করেছে কি না, সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’