• মাতৃ বন্দনা কমিয়েছে হাতির উপদ্রব, স্বস্তি মনোহর গ্রামে
    এই সময় | ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • এই সময়, বাঁকুড়া: জঙ্গলের মধ্যে হ্যাজাকের আলোয় বসে থাকা এক কালী মূর্তি। ঢাক এবং শাঁক বাজিয়ে পুরোহিত পুজো সারেন। ফাটানো হয় পটকাও।

    এমনই পুজো একটা সময়ে দেখা যেত বড়জোড়া জঙ্গল লাগোয়া মনোহর গ্রামে। হাতির হানা থেকে বাঁচতে নব্বইয়ের দশকে কিছু যুবক জঙ্গলের ভিতরে এ ভাবেই কয়েক ঘণ্টার কালী পুজো করতেন। কালীপুজোর রাতে একটি মূর্তি, পুজোর সামগ্রী এবং পুরোহিতকে নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে হতো সেই পুজো। বাজত ঢাক। এক ঘণ্টার মধ্যে পুজো সেরে যুবকরা ফিরতেন নিজেদের বাড়িতে।

    পুজো সারা হয়ে গেলে মূর্তি থাকত জঙ্গলেই। সেই যুবকরা জীবিকার কারণে বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায়ও থাকেন। কেউ আবার রয়ে গিয়েছেন গ্রামেই। তবে জঙ্গলের মধ্যে সেই পুজো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে একেবারে পুজো বন্ধ তো করা যায় না। তাই ১৯৭০–এ মনোহর স্কুলপাড়া শ্রীশ্রী সার্বজনীন শ্যামা মন্দিরে একটি ছোট কালী প্রতিমা তৈরি হয়।

    গ্রামের বাসিন্দা পার্থ মণ্ডল বলছিলেন, ‘৯০–এর দশকে বড়জোড়া–সহ বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের জঙ্গলগুলিতে দলমার হাতিদের আনাগোনা বেড়ে যায়। তাদের হাত থেকে জীবন এবং ফসল রক্ষা করতে এই গ্রামের কিছু যুবক কালী পুজো শুরু করেছিল।’ যোগ করলেন, ‘পরে সেই পুজো বন্ধ হয়ে যায় জীবিকার তাগিদে। ১৯৭০ সালে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা।’

    পুজো ঘিরে পাঁচ দিন জমজমাট থাকা মনোহর গ্রাম। বাড়িতে আত্মীয় আগমন ছাড়াও মঙ্গলঘট নিয়ে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নরনারায়ণ সেবা হয়। হয়ে থাকে। গ্রামের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এই পুজোর পরে হাতির উপদ্রব অনেকটাই কমেছে। তা ছাড়া কালী পুজোর সময়ে বন দপ্তরও বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকে। বিশেষ ধরনের ফেন্সিংও দেওয়া হয়।

    তবে এই মুহূর্তে বাঁকুড়া উত্তরের জঙ্গলগুলিতে সবমিলিয়ে ৭১টি হাতি রয়েছে। ফলে দীপাবলির রাতেও উৎসবের সঙ্গে থাকে গজরাজদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার তাগিদও।

  • Link to this news (এই সময়)