ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনকে (এসআইআর) কেন্দ্র করে রাজ্যে রাজনীতির পারদ ক্রমশ চড়ছে। কোনও ভোটার বাড়িতে না থাকলে, তাঁর ফর্ম দলীয় কর্মীদের পূরণ করে বিএলও-র (বুথ লেভেল অফিসার) কাছে জমা করার নির্দেশ দিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছেন বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী। এই কাজে কেউ ‘মস্তানি’ করলে কেন্দ্রীয় বাহিনী ডান্ডা, গুলিও চালাতে পারে বলে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বাঁকুড়ার প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার।
কয়েক দিন আগেই খড়্গপুরে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চে কয়েক জন বিএলও-র উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধীরা। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও হয়েছে সেই ঘটনায়। এর মধ্যেই, শুক্রবার বাঁকুড়ার সিমলাপালে দলের বিজয়া সম্মিলনীতে সাংসদ অরূপ বলেছেন, ‘‘বিএলও-রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবেদনপত্র দেবেন। তাঁরা পূরণ করতে সহায়তা করবেন। কিন্তু কোনও ভোটার বাড়িতে না-থাকলে, বিএলও-র রিপোর্টে তিনি অনুপস্থিত বলে চিহ্নিত হবেন। তাঁর নাম তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। যে সব ভোটার বাড়িতে থাকবেন না, তাঁদের আবেদনপত্র নিয়ে দলীয় কর্মীরাই পূরণ করে বিএলওকে জমা দেবেন। কাউকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ যেতে দেব না! পাড়ায়-পাড়ায় নাগরিক কমিটি তৈরি করুন।’’ তাঁর দাবি, বাংলায় এক কোটি মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুচিন্তিত পরিকল্পনা চলছে।
প্রশাসন জানাচ্ছে, বিএলও-রা নিয়ম মেনে কাজ করছেন কি না, তাঁদের সঙ্গে ঘুরে শুধু সেটুকুই দেখতে পারবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিএলএ-রা (বুথ লেভেল এজেন্ট)। তবে তাঁদের সঙ্গে কমিশনের পরিচয়পত্র থাকতে হবে। তাঁরা অন্যের আবেদনপত্র পূরণ করতে পারবেন না। আবেদনপত্র পূরণে শুধু বিএলও-রাই সহায়তা করবেন। আবেদনপত্র পূরণের জন্য এক মাস সময় থাকার কথা। কিউআর কোড-সহ আবেদনপত্রে সই থাকতে হবে ভোটারের। কর্মসূত্রে বা অন্য কারণে কেউ বাইরে থাকলে, তিনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়ি এসে আবেদনপত্র পূরণ করতে পারেন। কিংবা, পরিবার তাঁকে ওই আবেদনপত্র পাঠিয়ে দিলে, তিনি বাইরে থেকেই তা পূরণ করে নির্দিষ্ট পোর্টালে জমা করতে পারবেন।
তৃণমূল সাংসদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সুভাষের দাবি, ‘‘শুধু বিএলও-রাই নয়, পুরো প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকছে। তাই বিএলও-দের কাজে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। যদি কেউ মস্তানি করতে গিয়ে উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করেন, তা হলে কেন্দ্রীয় সুরক্ষা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে। ডান্ডা বা গুলি চালানোর মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।’’ তিনি জানান, পরিস্থিতি তেমন হলে কমিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ করবেন। তাঁর দাবি, বৈধ ভোটারের নাম বাদ যাবে না।
তৃণমূল সাংসদ অরূপ রবিবার অবশ্য বলেন, ‘‘এসআইআর-কে কেন্দ্র করে নির্বাচনের আগে সমস্যা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে বিরোধীরা। তাই মানুষকে সচেতন করতে বলছি। বিতর্কিতকিছু বলিনি।’’