• ভর্তি দুর্নীতি রুখতে ব্রাত্য আইন বিভাগ
    আনন্দবাজার | ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • শুধু মাত্র নিরপেক্ষ দায়িত্বশীল বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে পরীক্ষার আয়োজনই নয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ এলএলবি-র ভর্তি প্রক্রিয়াও এ বার আইন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হাজরায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে অনেক দূরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য একটি বিভাগে ভর্তি প্রক্রিয়ার বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

    বছর দুই আগে আইন বিভাগের এক জন উচ্চ আধিকারিকের ছেলের আইন প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম স্থান পাওয়া নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল। সেই আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিধিমাফিক পদক্ষেপও করেন কর্তৃপক্ষ। এর পরেও সংশ্লিষ্ট বিভাগে ‘সর্ষের ভিতরে ভূতে’র নানা আভাস মিলেছে। অভিযোগ, আইন বিভাগের আধিকারিক যে পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সেখানেই তাঁর সন্তানের সিট পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। গত জুনে কসবার সরকারি আইন কলেজে জনৈক ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনা সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি আইন কলেজগুলির ভর্তি প্রক্রিয়ায় আরও নানা রকম দুর্নীতি সামনে আসে। দেখা যায়, ধর্ষণে অভিযুক্ত, শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এক ছাত্রের র‌্যাঙ্ক অনেক নীচে হওয়া সত্ত্বেও রহস্যজনক ভাবে সে ওই সরকারি কলেজেসুযোগ পেয়েছে।

    এই ধরনের নানা অভিযোগ সামনে আসায় ১০০ শতাংশ স্বচ্ছ ভাবে আইনে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এ বছর বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত দে বলেন, ‘‘হাজরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য একটি ক্যাম্পাসে পুরো ভর্তি প্রক্রিয়ার বিষয়টি দেখা হচ্ছে। স্বচ্ছতার প্রশ্নে এক ফোঁটা আপস করা হবে না।’’ কালীপুজোর ছুটির মধ্যেই মেধা তালিকা বেরিয়ে যাবে এবং অনলাইনে কাউন্সেলিংয়ের সব প্রস্তুতিও সারা হবে বলে জানান তিনি।

    কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘একটা সময়ে বিএ এলএলবি-র প্রবেশিকা পরীক্ষায় মেধা তালিকায় উপরের দিকে থাকলেও অনেকে কয়েকটি কলেজের কাছাকাছি ঘেঁষতেই পারতেন না বলে অভিযোগ আসত। পরে অনলাইন কাউন্সেলিং হলেও ভর্তি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।’’ এ বার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ তথা হাজরা ল কলেজ, যোগেশচন্দ্র আইন কলেজ, সুরেন্দ্রনাথ, দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজ, পুলিশ ল কলেজ এবং ন’টি বেসরকারি আইন কলেজের উচ্চ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ স্তরের আধিকারিকেরা। তখনই সংরক্ষিত, অসংরক্ষিত মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের আসনের বিন্যাস এবং প্রতিটি কলেজের বেতন কাঠামো বিষয়ে ধন্দ খোলসা করা হয়। সূত্রের খবর, কয়েকটি কলেজে বেতন কাঠামোর ক্ষেত্রেও কিছু অনিয়মেরআভাস পেয়ে হস্তক্ষেপ করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

    কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক জানান, ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যে প্রবেশিকার ফল বেরিয়েছে। মেধা তালিকা তৈরির কাজ চলছে। শিক্ষার্থীদের অনলাইন কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া নিখুঁত ভাবে করার তোড়জোড় চলছে বলে জানান তিনি। দেরিতে পরীক্ষা হওয়ার দরুন পরীক্ষার্থী কমেছে কিছুটা। টিসিএস সংস্থার মাধ্যমে কম্পিউটারে লিখিত ব্যবস্থায় গত মঙ্গলবার পরীক্ষা হয়েছে। ৩৮২৭ জন পরীক্ষায় বসেন। আসন সংখ্যা ২১৭০টি। নিয়ম মেনে মেধার ভিত্তিতে যোগ্য শিক্ষার্থীরা এ বছর সরকারি কলেজে সামান্য খরচে পড়ার সুযোগ পাবেন বলে আশা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)