• টেটের গেরোয় শঙ্কা মাধ্যমিক শিক্ষকদেরও
    আনন্দবাজার | ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে, প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিক পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষককে টেট পাশ করতে হবে। যাঁরা টেট পাশ নন তাঁদের দু’বছরের মধ্যে টেট পাশ করে নিতে হবে। এই নির্দেশের ফলে রাজ্য জুড়ে প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিকের হাজার হাজার শিক্ষক যাঁদের নিয়োগের সময় টেট পরীক্ষা বিধি ছিল না তাঁদের চাকরি নিয়ে নানা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওই শিক্ষকদের ফের টেট পরীক্ষায় বসতে বাধ্য করা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে।

    মাধ্যমিক স্তরে (নর্মাল সেকশন) যাঁরা শিক্ষকতা করেন, তাঁরাও সমস্যায় পড়েছেন। তাঁদেরও অনেককে শিক্ষকের অভাবে উচ্চ প্রাথমিক স্তরে (ক্লাস এইট পর্যন্ত) ক্লাস নিতে হয়। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি তাঁদেরও টেটে বসতে হবে? ওই শিক্ষকদের অনেকের দাবি, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশনের সময় শিক্ষা দফরতকে ভাল ভাবে তুলে ধরতে হবে।

    মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ২০১৬ সালের আগে তাঁদের যখন নিয়োগ হয়েছিল তখন আলাদা করে উচ্চ প্রাথমিক স্তরে ভাগ ছিল না। তখন রিজিয়োনাল লেভেল সিলেকশন টেস্টের (আরএলএসটি) মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ হত। মাধ্যমিক স্তরের যে শিক্ষকদের নিয়োগ হল, তাঁদের কাউকে আলাদা করে উচ্চ প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক হিসাবে দেখানো হত না।

    কিন্তু ২০১৬ সালের পরে এই নিয়ম পাল্টায়। স্কুল সার্ভিস কমিশন উচ্চ প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য আলাদা পরীক্ষা এবং নবম, দশম এবং একাদশ, দ্বাদশের শিক্ষকদের জন্য আলাদা পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে। যাকে বলা হয় স্টেট লেভেল সিলেকশন টেস্ট (এসএলএসটি)।

    মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক যাঁরা ২০১৬ সালের আগে নিযুক্ত হয়েছেন তাঁদের একাংশের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির মধ্যে বহু শিক্ষক অবসর নিয়েছেন। আরও নানা কারণে উচ্চ প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক না-থাকায় মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের অনেককে উচ্চ প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক হিসাবে দেখাতে শুরু করেছে শিক্ষা দফতর। এতেই আশঙ্কায় ভুগছেন ওই শিক্ষকরা। তাঁদের আশঙ্কা উচ্চ প্রাথমিক পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষকদের যেহেতু টেট দিতে বলা হয়েছে, তাহলে তাঁদের আবার টেট দিতে হবে না তো? কারণ তাঁরা সবাই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক। তাঁদের তো টেট ছাড়াই নিয়োগ হয়েছিল।

    মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি এবং অল পোস্টগ্র‍্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, ‘‘২০১৬ সালের আগে এসএসসি (আরএলএসটি) পরীক্ষার মাধ্যমে নিযুক্ত কোনও শিক্ষককে উচ্চ প্রাথমিক শাখায় রাখা যাবে না। এবং ২০১৬ সালের আগে উচ্চ প্রাথমিক বলে কোনও সেকশন এই রাজ্যে ছিল না তা সুপ্রিম কোর্টে তুলে ধরতে হবে। সেই সঙ্গে বেতন সংক্রান্ত পোর্টালে কারা মাধ্যমিক স্তরের বা নর্মাল সেকশনের শিক্ষক তা উল্লেখ করতে হবে। তাঁদের কাউকে উচ্চ প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক হিসেবে দেখানো যাবে না।’’ এখন ওই পোর্টালে সব শিক্ষকদের মাধ্যমিক স্তরের পাশাপাশি উচ্চ প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক হিসেবেও দেখানো হচ্ছে। ওই দুই সংগঠনই এই নিয়ে বিকাশ ভবনে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

    তবে শিক্ষা দফতরের এক কর্তার দাবি, ২০১২ সালে আরএলএসটি পরীক্ষা যাঁরা দিয়েছিলেন তাঁরা সবাই টেট উত্তীর্ণ ছিলেন । তার আগে যাঁরা মাধ্যমিক স্তরে নিযুক্ত হয়েছিলেন সেই শিক্ষকদের বিষয়ে আলোচনা চলছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)